লেখাটিতে রবীন্দ্রনাথের অজানা তথ্য গুলির সংকলন রইল। এখানে রয়েছে এমন কিছু অজানা তথ্য যা খুব কম মানুষই জানেন!
রবীন্দ্রনাথের অজানা তথ্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অজানা কথাতে থাকছে-
রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রেম!
তাঁর প্রথম প্রেমিকাকে নিয়ে তিনি কোনোদিনই প্রকাশ্যে কিছু বলেননি… কিন্তু সারা জীবন মনে রেখেছেন।
রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রেম ছিল তাঁর বড়দার শ্যালিকা আনন্দবাই। খুব কম বয়সে তাঁর প্রতি গভীর আকর্ষণ তৈরি হয়।
কিন্তু এই সম্পর্ক ছিল সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ। তিনি নিজের কবিতায় – বিশেষ করে “নিষ্ঠুর আমার এই প্রেম” বা “বিধির বাম” – সেই প্রেমের দহন প্রকাশ করতেন।
“সে যে এসেছে জীবনে, গোপনে… থেকে গেছে হৃদয়ের প্রান্তে।”
এমনকি মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেও তিনি এই প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারেননি।
নোবেল পুরস্কার চুরি হয়ে গিয়েছিল – এবং আজও ফিরে আসেনি!
১৯১৩ সালে সাহিত্যে পাওয়া তাঁর নোবেল মেডেলটি ২০০৪ সালে শান্তিনিকেতন থেকে চুরি হয়ে যায়। দুঃখজনকভাবে, এত বড় ঘটনার পরও আজ পর্যন্ত আসল মেডেলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পরবর্তীতে সুইডিশ সরকার একটি রেপ্লিকা প্রদান করে, কিন্তু আসল মেডেলটি হারিয়ে যাওয়া বাঙালির গর্বে এক স্থায়ী দুঃখ চিহ্ন। বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপক বলেছিলেন “মনের জোর তো আছে, কিন্তু স্মৃতির রক্তক্ষরণ থেমে নেই।“

জীবনে একবার তিনি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন
মাত্র ১১ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথকে পাঠানো হয় বোলপুরে এক নির্জন আশ্রমে। একাকিত্ব, মাতৃ-বিয়োগ আর মানসিক অস্থিরতা তাঁকে তীব্রভাবে আঘাত করে।
তিনি পরে নিজেই লিখেছেন—
“এমনও এক সময় গিয়েছিল, যখন মনে হয়েছিল, থাকবার কোনও মানেই নেই আর। কিন্তু একটা পাতার নড়ে ওঠা, একটা বকুল ফুলের গন্ধ… সে আমাকে ধরে রেখেছিল।”
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে কবিতা লিখতে সাহায্য করেছিল। হয়ত আত্মহত্যার ধারে এসেই তিনি সৃষ্টিকে বেছে নিয়েছিলেন।
তাঁর গলায় কখনো সুর ছিল না – অথচ তিনিই সৃষ্টি করেছেন হাজারো গান!
রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছিলেন তাঁর গলায় ঠিক সুর ছিল না।
তাঁর গান ছিল অনুভূতির গান – টিউন বা স্কেলের তোয়াক্কা না করে তিনি গাইতেন। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ গায়ক একবার মজা করে বলেছিলেন,- “রবিবাবু যদি গান শোনান, আমি সেইদিন সুর ছাড়ি!”
তবুও তাঁর সেই “অসুরেলা” গলায় রেকর্ড করা গান আজও হৃদয়ে বাজে, কারণ গানের মধ্যে ছিল আত্মার সংযোগ।
তিনি ছিলেন ঘুমকাতুরে! এমনকি লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়তেন
বিশ্বাস করা কঠিন হলেও, তিনি এমন এক মানুষ ছিলেন যিনি লিখতে লিখতে, ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়তেন।
এমনকি শান্তিনিকেতনের এক ছাত্র লিখেছিলেন—
“গান লিখতে লিখতে কলম থেমে যেত… আমরা দেখতাম, কবিগুরু জানালার পাশে মাথা হেলিয়ে নিঃশব্দে ঘুমিয়ে পড়েছেন।”
এই সহজ-সরল, মানবিক রবি আমাদের সবার চেনা রবির চেয়ে অনেক বেশি আপন।
ইংরেজি লেখিকার সাথে বন্ধুত্ব
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে অনেক ইউরোপীয় ও পাশ্চাত্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে, তাঁদের মধ্যে ইংরেজ লেখিকা অ্যান হিলডারবার্গ (Anna Hilda Hilderberg) বা কারও মতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো-র মতো নারীরাও ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নানা বিতর্ক ও গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে আদর করে ডাকতেন “ভিজি”, এবং তাঁকে উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর “পুরবি” কাব্যের কিছু রচনা।
ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ বোধ করতেন। তাঁদের সম্পর্ক একধরনের বৌদ্ধিক ও আত্মিক সংযোগে ভরপুর ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ভয় পেতেন ডাক্তার আর হাসপাতালকে!
জীবনের শেষভাগে তাঁর শরীর খারাপ ছিল। চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দিলেও তিনি বারবার পিছিয়ে যেতেন।
একবার তিনি বলেছিলেন—
“জীবনের শেষে চিকিৎসা নয়, শান্তি চাই…”
তাঁর এই ভয় ছিল আসলে যন্ত্রণা নয়, নিজের স্বাধীন সত্তাকে হারানোর ভয়।
তিনি প্রায় ১০০ বছর আগেই বলেছিলেন – “নারীর মুক্তি না হলে ভারত মুক্ত হবে না”
১৮৯০-এর দশকে, যখন নারী শিক্ষা প্রশ্নের মুখে, তিনি তাঁর লেখায় স্পষ্ট বলেন—
“নারীকে বন্দিনী রাখলে সমাজ অন্ধই থাকবে।”
‘চণ্ডালিকা’, ‘চোখের বালি’, ‘স্ত্রীর পত্র’-এর মতো রচনায় তিনি সাহসিকতার সাথে নারীর আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন তোলেন তিনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি-
তিনি তাঁর ছেলের মৃত্যুর পর একটি কবিতাও লিখতে পারেননি ৭ মাস ধরে!
রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স যখন মাত্র ১০ বছর তখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান, এই ঘটনায় রবীন্দ্রনাথ যেন একেবারে ভেঙে পড়েন। তাঁর কলম থেমে যায়। ৭ মাস পর্যন্ত তিনি কিছুই লেখেননি।
পরে তিনি লিখেছিলেন—
“আমি শূন্য হয়েছি… এই শূন্যতায় একমাত্র সৃষ্টিই আমাকে আবার পূর্ণ করল।”
এই ভয়াবহ কষ্টই তাঁকে নতুনভাবে কবিতার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
তাঁর হাতে ছিল পাখির মতো লেখা – ডাকঘরের পাণ্ডুলিপি দেখে ভেবেছিল চিত্রকলার কাজ
রবীন্দ্রনাথের হস্তাক্ষর ছিল এতটাই শিল্পসুলভ, যে অনেক গবেষক প্রথমে তাঁর স্ক্রিপ্ট দেখে ভেবেছিলেন এটি কোনও চিত্রশিল্পীর খসড়া। রবীন্দ্রনাথ লিখতেন ভিন্ন কোণে, আঁকাবাঁকা ঢংয়ে, এমনকি মাঝে মাঝে পঙ্ক্তির মাঝেই আঁকতেন অদ্ভুত সব ছবি।

তিনি নিজের কবিতা পছন্দ না হলে, ছিঁড়ে ফেলতেন!
রবীন্দ্রনাথ একবার তাঁর এক কবিতার পূর্ণ পাণ্ডুলিপি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, কারণ শেষ স্তবক তাঁর নিজের মনমতো হয়নি।
এক সহচর বলেন, “রবিবাবু বলতেন—‘মন মেলেনি কবিতার সাথে, আবার লিখতে হবে।”
এটাই ছিল তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি—নিজের সৃষ্টির সাথেও আপস নয়।
তিনি গান লিখতেন মাঝরাতে, ঘরের দরজা বন্ধ করে, কাঁদতে কাঁদতে
অনেক গান যেমন “আমার মুকুট” বা “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে”—এই গানগুলো তিনি লিখেছেন এমন সময়, যখন তিনি একাকিত্বে ভুগছিলেন।
তারপর দরজা খুলে শুধু বলতেন—
“আজ শব্দরা কান্না হয়ে এলো।”
রবীন্দ্রনাথের সম্পূর্ণ জীবনী-
এই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অজানা কিছু তথ্য। এই তথ্য গুলি খুব কম সংখ্যক মানুষই জানেন, আর আমাদের কাজ হলো সেগুলি আপনাদের সামনে তুলে ধরা। আশা রাখছি এই সংস্করণটি ভালো লেগেছে।
Discover more from intellectpedia
Subscribe to get the latest posts sent to your email.