গতিশীল জীবনের ঘটনা নিয়েই শিক্ষণীয় ছোট গল্প নিয়ে আসা হয়েছে। এই বাস্তব ধর্মী শিক্ষণীয় গল্প গুলি জীবনে এগিয়ে যেতে আপনাকে অবশ্যই সহযোগিতা করবে।
শিক্ষামূলক গল্প-
শিক্ষণীয় ছোট গল্পঃ-
“সব জান্তা”-
কিছুদিন আগের কথা। বিলাশপুর গ্রামে এক দম্পতি বসবাস করত। গ্রামের মাঝ বরাবর তাদের দোতালা বাড়ি। আর সেই বাড়ির নীচের তালায় রাখা আছে অনেক সামগ্রী। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন আসবাবপত্র, দামি কাপড় ইত্যাদি। আর এর মধ্যে সব থেকে বিশেষ হল একটি সিন্দুক। সেই সিন্দুকে রয়েছে বেশ কিছু দামি রত্ন এবং তাদের টাকা পয়সা।
বেশ মজবুত করেই ঘরের দরজা লাগানো। তাই দম্পতি বেশ নিশ্চিন্ত।
একদিন গভীর রাতে মহিলাটির ঘুম ভেঙে গেল দরজা ভাঙার শব্দে। মহিলাটি ব্যস্ত হয়ে তার স্বামীকে বললেন- “শুনছো আমার মনে হল নীচের ঘরের দরজা কেউ ভেঙেছে, কোনো চোর-টোর হয় যদি! তুমি একটু দেখে এসো।
মহিলাটির স্বামীর উত্তর- “হ্যাঁ আমি জানি তো।

একটু পর মহিলাটি বলল- “আমার মনে হচ্ছে নীচের ঘরে রাখা বাসন গুলি ঝনঝন করে পরে গেল, এটা নিশ্চয় চোর চলো না দেখে আসি।“
মহিলাটির স্বামীর উত্তর- “আমি জানি তো এটা বাসনের শব্দ।“
একটু পর মহিলাটি বলল- “আমার মনে হচ্ছে সেই চোর সিন্দুকটি খোলার চেষ্টা করছে, চলো দেখে আসি নাহলে সব খুইয়ে পথে বসবো।“
স্বামীর উত্তর- “জানি তো সব খুঁয়ে গেলে পথে বসবো।“
কিছুক্ষণ পর মহিলাটি বললো- “শুনো শুনো এটা অবশ্যই সেই সোনার চুড়ি গুলির আওয়াজ, চলো তাড়াতাড়ি।“
লোকটি উত্তর দিল- “আমি জানি তো এটা চুড়ির শব্দ।“
কিছুক্ষণ পর সব কিছু নিস্তব্ধ। মহিলাটি বললো- “চোরটা মনে হয় পালাচ্ছে চলো এখনো সময় আছে ওকে ধরা যাবে।“
লোকটি উত্তর দিল- “জানি তো পালাচ্ছে।“
মহিলাটির ধৈর্যের সীমা এবার অতিক্রম হলো সে চেঁচিয়ে বললো- “আরে রাখো তোমার সব জানি সব জানি কথা। এতই যখন জানো তাহলে ব্যবস্থা নিচ্ছ না কেন কিছু! পুরো বাড়ি লুটে নিয়ে চলে গেলো আর এই লাট সাহেব ‘জানি তো’ করেই যাচ্ছে। তোমার ওই সব জানি এবার একটা কাগজে লিখে ভাতে দিয়ে খাবে।“
আমাদের মাঝেও এমন লোকের অভাব নেই। যারা এমন ভান করে যেন সে সব জানে। কিন্তু কর্ম করার বেলায় সে পিছিয়ে যায়। এই সব জান্তা লোক গুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। এই সব জান্তা মানুষ গুলি নিজের সাথে সাথে আপনাকেও নিচে নেমে টেনে নামাবে।
আপনি সহজ সরল ভাষায় লেখা এই মোটিভেশনাল গল্পগুলিও পড়তে পারেন-
“আসল শিক্ষা”-
গ্রামের নাম হতিমপুর। গ্রামে জলের অভাব বড্ড বেশি। কাজেই মহিলারা গ্রামের শেষের বড় কুয়োতে দল বেঁধে জল আনতে যায়। এরকমই একদিন চার মহিলা সেই কুয়োতে জল আনতে গেছে। জল ভরতে ভরতে তাদের মধ্যে নিজেদের ছেলেকে নিয়ে আলোচনা করতে থাকে।
প্রথম মহিলা বললেন- “ আমার ছেলে ইংরেজিতে পারদর্শী। অনেক বড় বড় ইংরেজি উপন্যাস তার কণ্ঠগত। আমার মনে হয় না আমার ছেলের মত ইংরেজি এই গ্রামের কেউ পারবে।“
দ্বিতীয় মহিলা বললেন- “আমার ছেলে জ্যোতিষ শাস্ত্রে অনার্স করেছে। নক্ষত্র দেখে সে সবার ভূতভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে। আমি নিজেও অবাক হই আমার ছেলে এত বিদ্বান কীভাবে!”

দ্বিতীয় মহিলার কথা শুনে তৃতীয় মহিলা চুপ থাকতে পারলেন না। তিনি বললেন- “আমার ছেলে কলেজের প্রফেসর। কত বড় নামি দামি মানুষের সাথে তার উঠা বসা। এই ছেলেকে নিয়ে আমার গর্ব হয় অনেক।“
চতুর্থ মহিলা চুপচাপ আছে দেখে বাকি তিন মহিলা একসাথে বলে উঠলেন- “তোমার ছেলে কি করে, সে কতদূর পড়াশোনা করেছে!”
চতুর্থ মহিলা বললেন- “আমার ছেলে পড়াশোনা তেমন করেনি। প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত সে পড়েছে। আমার ছেলে তার বাবার কাছে মাঠে কাজ করে।
এটি শুনে বাকি তিন মহিলা মিটিমিটি হাসতে লাগলো। এরপর তারা একসাথে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যায়।
আসার পথে প্রথম মহিলার ছেলে বিপরীত দিক থেকে হেঁটে আসছিল, মা কে দেখে সে প্রণাম করে তার গন্তব্যে চলে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পর দ্বিতীয় মহিলার ছেলেকে দেখা গেল, সেও তার মাকে প্রণাম করে তার গন্তব্যে চলে গেল। ঠিক একই ভাবে তৃতীয় মহিলার ছেলেটিও মাকে প্রণাম করে চলে গেল তার পথে।
তিন মহিলা নিজেদের গর্বিত মনে করতে লাগলো তারা চতুর্থ মহিলার দিকে তাকিয়ে আবার মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
কিছুদূর যাওয়ার পর চতুর্থ মহিলার ছেলেটি মাথায় একটি ঘাসের বোঝা নিয়ে এলো। মা কে দেখে সে ঘাসের বোঝা টি নামিয়ে বলল- “আমি থাকতে তুমি কষ্ট করে এতদূর জল নিতে এসেছ কেন, আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি এসে জল নিয়ে আসবো তুমি কথা শুনো না কেন মা! দাও দাও জলের কলসি টা আমাকে দাও। এই শরীরে আবার জলের কলসি বইছে!”

এরপর ছেলেটি একহাতে কলসিটি নিয়ে অন্য হাতে ঘাসের বোঝা নিয়ে মা কে সামনে যেতে বলে মায়ের পিছনে পিছনে ঘরের দিকে রওনা হল। চতুর্থ মহিলাটি একবার বাকি তিন মহিলার মুখের দিকে দেখল, তারা সবাই মুখ নিচে করে আছে। মহিলাটি তাদের ‘আমি আসি’ বলে বিদায় নিলেন।
শুধু মাত্র পুথিগত শিক্ষাতেই আমাদের জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলে না। একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে তার আচরণ এবং কথা বলার ভঙ্গিতে। তাই মোটা মোটা বইয়ের পাশাপাশি শিশুদের সৎ ব্যবহার শেখানো উচিত। পুথিগত বিদ্যা মানুষকে ভালোভাবে বাঁচতে শিখালেও একজন ভালো মানুষ করতে পারে না। ব্যবহারের শিক্ষাটা একজন মানুষের মধ্যে তার পরিবার থেকেই আদায় হয়।
Discover more from IntellectPedia
Subscribe to get the latest posts sent to your email.