Spread the love

এই রহস্যময় বাংলা গল্প টির মূল কেন্দ্রে রয়েছে বৃক্ষ-প্রেমী বয়স্ক- হরি। তার রহস্যময় মৃত্যু ও গাছের প্রতিশোধ সব মিলিয়ে রহস্যময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে গল্পে।

রহস্যময় বাংলা গল্পঃ- “গেছো হরি”

কালবৈশাখীর ঝড়ে আজ বাবুলতলার মাঠ ঘাটে গাছ ভেঙে ছারখার অবস্থা। বুড়ো হরি টা মরে ভালোই হয়েছে, নয়তো তার গাছেদের এরূপ বিপর্যয় সে কখনোই জীবিত থাকলে মেনে নিতে পারতো না। নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতো বুড়ো টা এই গাছ গুলোকে। গাছের জন্য কোনো মানুষ সংসার ত্যাগী হয় , সেকথা স্বচক্ষে বুড়ো হরি কে না দেখলে হয়ত জানতেই পারতাম না।

মা যেভাবে তার দুই হাত দিয়ে তার সন্তান কে আগলে রাখে ,বুড়ো টাও ঠিক সেভাবেই আজীবন এই শাল,সেগুন, মেহগনি,আকাশমনি ,সুপারি ,চন্দন ,আম ,জাম ,কাঁঠাল, সোনাঝুরি ,আরো অসংখ্য অজানা গাছের দেখভাল করে আগলে রেখেছিল এতকাল। এমনকি শেষে মৃত্যুর সময়েও ওই বেল চারা টা কে দুই হাতে আগলে মরেছে।

কিন্তু হরির মৃত্যুর রহস্য টা আজ অবধি সবার অজানা , হঠাৎ করে কি যে হলো কেও বুঝে উঠতেই পারল না , বুড়ো বয়সেও লোকটার শরীর ছিল সুঠাম । একা হাতে এত বড় অঞ্চলে এত গাছের দেখভাল করা , চোরা শিকারিদের , কাঠুরেদের হাত থেকে গাছ গুলোকে নিজের বুক দিয়ে রক্ষা করে রেখেছিল এতকাল । এভাবেই বেশ ভালো চলছিল হরির জীবন।

রহস্যময় বাংলা গল্প
রহস্যময় বাংলা গল্প

তবে সেই ভালো-তে নজর দিয়েছিল তার নিজের ভাই এর ছেলে শ্য্যমল। জেঠুর যত্ন করে লাগানো গাছের বাগানে তার কু-দৃষ্টি পড়ে। সে চোরা কাঠুরে ডেকে প্রায় রাত্রে শেষের দিকের গাছ গুলোকে কাটাতে শুরু করে , এসব কথা প্রথম কয়েকদিন হরি টের না পেলেও , আমি বেশ ভালো মতই টের পেয়েছিলাম । হরি যখন এসব ব্যাপারে জানতে পারল ওর প্রিয় আকাশমনি এর 5 টা গাছ তার ভাইপো কাটিয়ে নিয়েছে, সে তখন রাগে দুঃখে ক্ষোভে ছুটে গেলো তার ভাই এর কাছে ।

বড্ড কষ্ট পেয়েছিল সেদিন হরি টা , ওর ভাই ওকে দুরদুর করে ঘর থেকে বিতাড়িত করে মুখের ওপর দরজাটা কষিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিল। হরি তার গাছেদের ধরে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল সারারাত। এরপর থেকে হরি টা দিনদিন কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যেতে লাগলো। তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় গাছগুলোর ওপর আঘাত হানার অর্থ তার আত্মার ওপর আঘাত হানা।

এরপর কি যে হলো , আর হরি কে গাছের বাগানে দেখতে পেতাম না। হঠাৎ একদিন শুনলাম সে নাকি বেল চারা কে জড়িয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।
আমার চোখের সামনেই ওর সৎকার করা হলো ।

এরপর থেকে অনেকেই চেষ্টা করেছিল এই গাছগুলো হাতানোর। কিন্তু কোনো সুফল মেলেনি। সবাই বলত হরির মৃত আত্মা নাকি এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় তাই কেও গাছে হাত দিলেই , কোনো না কোনোভাবে সেই দিনেই তার মৃত্যু ঘটে। যদিও বা এটা কতটা সত্য তা আমার জানা নেই। আমার চোখের সামনেই একটা কাঠুরে একদিন গাছ কাটতে এসেছিল দুপুরে , তবে সে সেই গাছ কাটা শুরু করার আগেই সর্পা ঘাতে প্রাণ হারায়। এরপর লোক মুখে যে যা পেরেছে রটিয়ে বেড়েছে ।

bangla suspense story
bangla suspense story বাংলা গল্প

অবশ্য সেসবের ফল ভালোই হয়েছে । হরির গাছ গুলো দিকে গ্রামের লোকের নজর দেওয়া সাহস আর জন্মেনি , এমনকি তার ভাইপোদেরও না।
গাছেদের প্রাণ আছে তার প্রমাণ জগদীশ বাবু ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্র দিয়েই বুঝিয়ে ছিলেন । তবে আমি নিছক একজন দর্শক হয়ে বলতে পারি , আমি সেই যন্ত্র না দেখলেও হরির মারা যাওয়ার পর তার গাছেদের আচরণ দেখে বুঝতে সক্ষম , গাছেরাও কষ্ট পায়, তাদের ও আক্ষেপ হয়, তারাও মাতৃহীন শিশুর ন্যায় ছটফট করে দুঃখে।

হরির বাগানের একের পর এক গাছ শুকিয়ে যেতে লাগলো , তারা তো হরির মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি তাই তারাও প্রাণত্যাগ করছিল । এর মধ্যেই অর্ধেক জঙ্গল শুকনো রুগ্ন পত্র বিহীন একটা কাষ্ঠল শ্মশানে পরিণত হয়েছিল।

এরপর এক বড়ো কোম্পানি এলো তারা এই জায়গাটি কিছু টাকার বিনিময়ে হরির ভাইদের থেকে কিনে নিলো। জঙ্গল সাফ করে তারা এখানে বিল্ডিং বানাবে । এর প্রতিবাদ করার জন্য হরি জীবিত না থাকলেও , তার গাছেরা প্রতিবাদ জানালো , ভেঙে পড়ল একটি বিশালাকৃতির ইউক্যালিপটাস গাছ , কোম্পানির নামি দামি গাড়ির উপর।

দাম্ভিক কোম্পানির বস, একটুর জন্য প্রাণ রক্ষা পেলেন। আর খোঁজ খবর নিয়ে এখানে হরির আত্মার সম্পর্কে জেনে আর এখানে জন্মেও এলেন না । কানাঘুষোতে শুনেছি হরির ভাইয়ের বাড়িতে গুন্ডা পাঠিয়ে জঙ্গল বিক্রির টাকাটা উদ্ধার করিয়ে নিয়ে গেছে।

সবশেষে যখন ভাবলাম এবার জঙ্গল টা হয়ত কোনোভাবে টিকে থাকবে , তারপরেই এলো সেই কালবৈশাখীর প্রকাণ্ড ঝড় ,সেই ঝড়ে ছারখার হয়ে গেলো এত বড় হরির বাগান রূপী জঙ্গল টা। আর সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম এটা শুনে, হরির ভাইয়ের ঘরের বড় বেল গাছ টা পড়ে তাদের ঘর ভেঙে গেছে , এমনকি সেই ঘটনায় হরির ভাই আর ভাইপো প্রাণ হারিয়েছে।

ভয়ের গল্প
ভয়ের বাংলা গল্প

কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারলাম হরির মৃত্যুর পেছনে কাদের হাত ছিল।

ওদের বাড়ির ওই বেল গাছটাকে জড়িয়েই হরি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিল , আর সেই বেল গাছ এই যেন হরির মৃত্যুর প্রতিশোধ টা নিয়ে গেলো ।

গাছ ভেঙে ছারখার হলেও হরির জঙ্গলে হাত দেওয়ার সাহস আর কোনোদিনও কারুর হয়নি , নতুন করে নিজে থেকেই পলাশ, মহুয়া ,ইউক্যালিপটাস ,শাল প্রভৃতি গাছে ভরে গেছে হরির বাগান ।

হরির আত্মা হয়ত সত্যিই শান্তি পেয়েছে।

এবার আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি কে ?

আমি…..
আমি হলাম গ্রামের পরিত্যক্ত ওই জোড় নদী ,আমার জলকে সবাই অস্পৃশ্য ভাবে আমি শ্মশান ঘাটের নদী যে! আমার জমিতে কেও শেষযাত্রা ছাড়া আসে না , কিন্তু হরি… সে তো আজীবন আমার পাড়ের ধারেই গাছ লাগিয়ে লাগিয়ে সুন্দর বাগান বানিয়ে, আমার জলকেই কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলেছিল তার গাছের সংসার । তবে আমার কাছে থাকতো বলেই ওকে গ্রামের লোক ত্যাগ করেছিল .. সবাই বলত ও নাকি জীবিত চণ্ডাল…..

সত্যিই কি তাই?

গল্পের রহস্যাচারনে –

আলোরানি মিশ্র

পড়ুন-

দমফাটা হাসির গল্প- সদা সিঙ্গেল ক্লাব


Discover more from IntellectPedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top