Spread the love

ভালোবাসা কি সবকিছু জয় করতে পারে? পড়ুন বেলা ও সুলেখকের প্রেমের শেষ পরিণতির গল্প—যেখানে সামাজিক বাধা ও বাস্তবতা ভালোবাসার কাছে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রেমের শেষ পরিণতি

বাঙালি জাতি বেশ প্রগতিশীল , এদের মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় । রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোক কিংবা সামাজিক ক্ষেত্র এরা সব ক্ষেত্রেই বিশেষ অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি প্রেক্ষিতে যদি এখন নিজের লেখনী সত্তাকে কাজে লাগাতে না পারি তবে নিজের লেখনী কেই হেয় করা হবে। তাই আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব দুটি নিষ্পাপ মানুষের জীবনী, যাদের জীবন রাজনীতির কু নজরে অন্ধকার অতলে ডুবতে বসেছে।

আপনারা হয়ত এই গানটা অবশ্যই শুনেছেন – ” এটা কি 2441139 , বেলা বোস তুমি শুনতে পাচ্ছ কি ” তবে বাস্তবে যা ঘটেছে ” মাকে বলে দাও , বিয়ে তুমি করতে পারবে না ” ভাবছেন তো এতক্ষণ ধরে কিসব আবোল তাবোল বলছি, তাহলে চলে আসুন জেনেই নিন আসল ঘটনাটা ……

বাঁকুড়া জেলার সুভাষ পল্লি তে অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বেলা। মাত্র দুই বছর বয়সেই পিতৃবিয়োগে ঘটায় তাকে এবং তার মা কে সমাজের নানান অপমান লাঞ্ছনা অবহেলা সহ্য করতে হয়েছে। তবে অল্প বয়সী বেলার মা , স্বামীর মৃত্যুর পর , মেয়ের মুখ চেয়ে আর কখনও নিজের জীবন নিয়ে ভাববার চেষ্টা করেননি। তার জীবনের একমাত্র স্বপ্ন তার মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা। আর সমাজের চোখে নিজেদের সঠিক প্রমাণ করা ।

প্রেমের শেষ পরিণতি
প্রেমের শেষ পরিণতি

মায়ের সেই স্বপ্ন মাথায় নিয়েই বেলার ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা , তবে পড়াশোনাতে তার বিশেষ মনোযোগ না থাকলেও তার অঙ্কন শৈলী ও আল্পনার সুনিপুণ কারুকার্য যেকোনো চিত্রশিল্পীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য। রং তুলি গুলি যেন তার আঙুলের স্পর্শে জীবিত হয়ে ওঠে।

তখন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ , সরস্বতী পূজার সমস্ত দায়িত্ব এসে বর্তায় বেলার হাতে। সে দায়িত্ব সহকারে পুরো কলেজ সাজিয়ে তোকে কয়েকদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে। তারপর তার আলপনার ছোঁয়ায় যখন পুরো কলেজ বিস্মিত ঠিক তখন এই কলেজের প্রিন্সিপাল এর ছেলে সুলেখক এর মনে বেলার নামের রং তুলি টা বুলিয়ে যায়। সে মনে মনে বেলাকে তার জীবন সঙ্গী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় ।

এরপর থেকে বেলা, যেখানেই যেতো সুলেখক ও সেখানে গিয়েই হাজির হতো কিন্তু বেলা কিছুতেই সুলেখক কে পাত্তা দিতে রাজি হয় না। কারণ বাস্তববাদী বেলা ভালো মতোই জানত, তার মত দরিদ্র পরিবারের মেয়েকে সুলেখক ভালোবাসতে পারলেও তার বাড়ির কেও কোনোদিনও মেনে নেবে না। তাই সে সুলেখক কে বারবার প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। ভালোবাসা মানে না জাত পাত, ধর্ম , বর্ণ , উচ্চ নীচ , যোগ্যতা অযোগ্যতা ” এই কথা গুলো মুখে বলতে সহজ লাগলেও, সমাজের দৃষ্টিতে খুনির চেয়েও বেশি অপরাধী হয় কিন্তু এই ভালোবাসা।

এদিকে নাছোড় বান্দা সুলেখক কিছুতেই বেলা কে হারতে রাজি নয়। সে নিজের জীবন দেওয়ার ও চেষ্টা করে বেলার জন্য , তাই শেষমেশ সুলেখক এর জেদের কাছে বেলাকে হার মানতেই হয়। সে সুলেখক কে তার জীবন সঙ্গী রূপে মেনে নেয়। দেখতে দেখতে তিনটা বছর পেরিয়ে যায়। তাদের সম্পর্কের কথা উভয় পরিবারেই জানে। সুলেখক এর বাবা ছাড়া তার পরিবারের বাকি সদস্যরা বেলাকে তার চরিত্র গুণে মেনে নেয়। কিন্তু বেলার মা তাদের সম্পর্ককে মানতে পারেন না ।

তার মতে , যতদিন না তার মেয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হবে ততদিন পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে তিনি দেবেন না। সুলেখক কে তিনি সরাসরি এই ব্যাপারে জানালে , সুলেখক বেলার জন্য আজীবন অপেক্ষা করার কথা দেয়।

পড়তে পারেন- এক হারানো ভালোবাসার এই গল্পটিও-

অপেক্ষার শেষ প্রহর

এরপর কেটে যায় ৮ টা বছর ।

সুলেখক এখন সরকারি এক উচ্চ বিদ্যালয় এর বাংলার শিক্ষক , একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রদের সে পড়ায়। অন্যদিকে বেলা ,একটি ছোট খাটো অঙ্কন স্কুল খুলেছে সেখানেই সে বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখায়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুলেখক এর অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে পড়ে, সে বারবার বেলাকে বিয়ের জন্য তার মায়ের সাথে কথা বলতে বলে। কিন্তু বেলা দুঃখের সাথে জানায়, এখনো পর্যন্ত তার ড্রয়িং রুমের ভাড়া তার মা কেই দিতে হয় , তার মায়ের চোখে এখনো সে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই কিছুতেই তার মা বিয়েতে রাজি নয় ।

এরপর সুলেখক নিজে গিয়ে বারবার কাকুতি মিনতি করার পর বেলার মা বিয়েতে রাজি হলেও কিছু শর্ত রাখে, যেগুলো সুলেখক মাথা পেতে মেনে নেয়। আর সুলেখক তার মা কে কথা দেয় , সে আজীবন তার মেয়ের সমস্ত দায়িত্ব নেবে , কোনোদিনও তাকে কষ্ট পেতে দেবে না। এমনকি তার সমস্ত কাজে সে সাহায্য করবে , তাকে প্রতিষ্ঠিত করতেও সুলেখক তার পাশে দাঁড়াবে। এসব শুনে শেষমেশ বেলার মা তাদের বিয়ের অনুমতি দিয়েই দেন ।

সুলেখক ও তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন টা পূরণ করতে চলেছে ভেবে তার জীবনে যেন এক সাথেই সমস্ত আনন্দ ঢেউ আছড়ে পড়ে।

তবে কথাতেই আছে – “ভাগ্য তে দুঃখ দীর্ঘস্থায়ী হলেও সুখ কিন্তু অল্প স্থায়ী এই হয় “

তাই ঘটলো সুলেখক এর জীবনেও , বিয়ের দিন ফিক্সড হয়ে গেছে মাত্র আর তিন দিনের অপেক্ষা তার মাঝে হঠাৎ সকালে নিউজ চ্যানেল খুলতেই সুলেখক এর মাথায় যেন আকাশ টাই ভেঙে পড়লো। তার এত সখের চাকরি টা সুপ্রিম কোর্ট থেকে বাতিল করে দিয়েছে ,শুধু সে নয় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক আজ আন্দোলনে নেমেছে চাকরি হারা হয়ে ।

তার পায়ের মাটি খসে পড়লো , কাঁদতে কাঁদতে বেলাকে কল করে জানালো আমি তো অনেক চেষ্টা করেছিলাম বেলা , কিন্তু ভগবান হয়ত আমাদের এক করতে চান না। আজ আমি চাকরি হারা এক বেকার যুবক। যার নিজের এই ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সেই অন্ধকার জীবনে তোমার মা কখনোই তোমাকে তলিয়ে যেতে দেবে না। তাই তুমি জানিয়ে দাও ” মা কে বলে দাও , বিয়ে তুমি করতে পারবে না ” ভালো থেকো …… আর পারলে এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের যাত্রী কে ক্ষমা কোরো।

অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বেলার জীবনটাও কেমন যেন তাসের ঘরের ন্যায় ভেঙে ছারখার হয়ে গেলো, বেলা জানতেও পারল না তার মায়ের শর্ত রাখতে অপারক সুলেখক এখন সর্বহারা। হেরে গেলো একটা অটুট সম্পর্ক ঘৃণ্য রাজনীতির কু দৃষ্টিতে। জিতে গেলো ঘুসখোর নেতাদের জঘন্য অপরাধ।

বাস্তব প্রেম কাহিনী
বাস্তব প্রেম কাহিনী

সু বিচারের আশায় হাজার হাজার শিক্ষক রাস্তায় নামলো , পুলিশের নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করলো , কিন্তু সবশেষে ও কি সুবিচার মিললো? তোমাদের জিজ্ঞাসা করছি… হ্যাঁ হ্যাঁ পাঠক পাঠিকাদের , তোমরাও কি এই বেলা বোস আর সুলেখক হতে চাও ? যদি না চাও তবে সময় থাকতে রুখে দাঁড়াও ……… ” পথে এবার নামো সাথি , পথেই হবে পথ চেনা “

আলোরানি মিশ্র

প্রতিবাদী ভাবনায়-



Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top

Subscribe