এই নতুন হাসির গল্প টির কেন্দ্রে রয়েছেন একজন বৃদ্ধ যিনি পত্নীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তার সাথে ঘটা ঘটনা নিয়েই এই মজার হাসির গল্পটি।
নতুন হাসির গল্প:- “জীবন্ত ভূত”
করেছিলাম বাপু ভালোবেসে বিয়ে, বউয়ের কতা শুনে মনে হবে এক আস্ত ডানা কাটা টিয়ে। সারাক্ষণ শুধু ঘ্যানর ঘ্যানর আর মশার মত প্যানার প্যানার। ওর আর দোষ কি বলুন, কথা তো দিয়েছিলাম আমিই, যে ওকে রাজরানি করে রাখব। বউকে আবার একটু শাসন করলেই বলে, যাব যেদিন বাপের বাড়ি, সব কাজ করবে তখন পরে বউয়ের শাড়ি।
এটা কোন কতা হল কউন দিকি ভাই। এই বউয়ের অত্যাচারর থেকে ইংরেজদের অত্যাচার অনেক গুনে ভাল আসিল। এই তো সেদিন, বউ আমাকে কথায় কথায় কয়ে দিল, “যেমন বাপ তেমন ব্যাটা” আমিও বাপের ব্যাটা ছেড়ে কথা বলার পাত্র নই। কয়ে দিলাম, “তোর মা যেমন করে চাকরি, মেয়ে তেমনই জন্মেছে ফোকরি।“
অমনি ব্যস অমনি, শুরু হয়ে গেল অ্যাভেঞ্জার এন্ড গেম। যাকগে বাপু এবার মর্দা কতায় আসি। বউয়ের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে আমি ঠিক করি দিন পনেরোর ছুটি কাটাতে চলে যাব শিমলা, তাও আবার বউ কে না জানিয়ে। দেখুক, আমি ছাড়া কেমন মজা সংসারে।

চুপি চুপি চলে গেলুম শিমলা। শিমলা তে ছুটি কাটাচ্ছি বিন্দাস। বউয়ের কোনো অত্যাচার নেই। সাথে ফোন নিয়ে আসিনি, তাই কেউ খোঁজও নিতে পারছে না। আহা আহা কি মজা। স্বর্গ আর কোথায়, এই বউয়ের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো টা কি স্বর্গ সুখের চেয়ে কম নাকি!
দেখতে দেখতে কেটে গেল ১০ দিন। একদিন দেখি, পেপারে আমার নাম বেরিয়েছে। পেপারে নিজের নাম দেখে থমকে গেলাম। আবার ভাল মত দেখলাম একটা ছবিও আছে। ছবি দেখে, আই এম তো অবাক! খুব আগ্রহ ভরে খবরটা পড়লাম। আর পড়ে যেটা বুঝলাম, যে আমি মারা গেছি। হুম ঠিক পড়েছেন আমি মারা গেছি। আর আমার লাশ শিমলা হসপিটালে পরে আছে। সেখান থেকে, একদিনের মধ্যে কোন আত্মীয় এসে যদি লাশ সংগ্রহ না করে, লাশ টিকে ওখানেই দাফন করা হবে।
যা শ্লা, আমি এখানে বসে নিজেরই মরার খবর পড়ছি! মাথাটা ঘুরে গেল। এই শ্লা কোন খবরের কাগজ যে জীবন্ত লোকের মরার খবর ছাপিয়েছে! মেজাজ টা পুরো চড়ে গেল। ঠিক করলাম এই খবরের কাগজের অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। কাগজের নিচে থেকে অফিসের ঠিকানা টা নিয়ে রওনা দিলাম।
প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গিয়ে, সোজা এডিটর এর রুমের দরজায় দড়াম করে একটা লাথি মেরে এন্ট্রি মারলাম। এডিটর এরকম ভিলেন টাইপের এন্ট্রি দেখে আবার চটে ‘চ’ হয়ে গেলেন। তার কিছু বলার আগেই, আমি চেঁচিয়ে বললাম- “আরে এই শ্লা এডিটরের বাচ্চা, জীবন্ত মানুষকে মরা বানাতে তোর হাত কাঁপল না।“
এডিটর কিছুটা থতোমতো হয়ে বলল- “মানে!”
আমি খবরের কাগজ টা তার দিকে ছুড়ে দিয়ে বললাম- দেখ মাঝখানের যে লোকটার মরার খবর তোরা ছাপিয়েছিস, সেটা হল আমি, আর আমি দিব্যি বেঁচে আছি।“
সে কয়েকবার খবরের কাগজ টার ছবিটার সাথে আমার মুখটা বার বার মিলাতে লাগল। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আমার দিকে- “আপনি তো জ্যান্ত কিন্তু পেপারের হিসেবে আপনি মৃত।“
আমি রেগে বললাম- “সেটা তো আমিও দেখতে পারছি, এখন কি করবি বল, তোদের নামে কেস ঠুকবো!”
সে কিছুটা ভয় পেয়ে বলল- “দাদা রাগ করবেন না, এই খবর গুলো সাংবাদিকেরা জোগাড় করে আমাদের দেয় আমরা তো শুধু সেগুলো প্রিন্ট করি, অত সত্যতা যাচাই করা কি যায়!”
আমি বললাম- “ফোন কর সেই সাংবাদিককে, আসুক শ্লা ওকে ভুল খবর দেওয়া ছাড়াচ্ছি।“
না, এখানে থেকে কোন কাজ হবে না, আমি বললাম- “আমি চললুম থানা, আপনাদের নিউজ পেপার করতে ফানা।“
লোকটা অনেক কিছু বলছিল, ওর কথা না শুনেই চলে গেলুম, থানায়। সেখানে সবটা বলার পর ইন্সপেক্টর হাসতে হাসতে মাটিতে পরে গিয়ে বললেন- “এরকম ভাগ্য কয় জনের হয় বলুন দিকি পাল বাবু, নিজের মরার খবর নিজেই পড়ছেন হাঁ হাঁ হাঁ।“
আমি বললাম- “না এখানেও কাজ হবে না…”
ইন্সপেক্টর আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন- “দাঁড়ান দাঁড়ান। আপনি একজন রহস্যময় ব্যক্তি আপনাকে এইভাবে কি যেতে দেওয়া যায়, চলুন আমার সাথে আপনার ডেড বডি শনাক্ত করতে।“
আমি বললাম- “আমার বডি তো এইখানে, এই যে আপনার সামনে, তাহলে আমি আবার কি বডি শনাক্ত করব।“
ইন্সপেক্টর বললেন- “চলুন চলুন দেড়ি করবেন না।“ একরকম বাধ্য হয়েই ইন্সপেক্টর এর সাথে হসপিটালে যাচ্ছি, আর ভাবছি, এটা নিহাত আমার সেই নচ্ছার পত্নীর কাজ, যেই আমি হাওয়া হয়ে গেছি দেখে আমার মৃত্যুর খবর ছাপিয়েছে।
হসপিটালে পৌঁছে জানতে পারলাম, আমার বাড়িতে ওরা খবর পাঠিয়ে দিয়েছে, আর ওরা নাকি এত দূরত্বের জন্য বডি নিয়ে যেতে চায়নি। তবুও মনে হল, এলাম যখন নিজের ডেড বডিটা দেখেই যাই।

ইন্সপেক্টর এর সাথে গেলাম, সেই মরা রাখার ঘরে, নিজের ডেড বডি শনাক্ত করতে, ভেবে দেখেছেন বিষয় টা, আমি নিজেই মরে গেছি আবার নিজেকেই শনাক্ত করতে যাচ্ছি।
দেখি, আমার নামে একটি বডি রাখা আছে। ডেড বডি থেকে কাপড় টা সরাতেই আমি চমকে গেলাম, আরে এটা তো সেদিন টয় ট্রেনে যে ব্যক্তিটার সাথে দেখা হয়েছিল, সেই ব্যক্তিটিই। এই ব্যক্তিরও বাড়ি আমাদের পশ্চিমবঙ্গে।
হসপিটালের স্টাফ দের কাছে থেকে জানতে পারলাম, তারা ডেড বডিটা চিহ্নিত করেছে, বডিটার মানী ব্যাগে রাখা একটি ভিজিটিং কার্ড দেখে।
আমি অবাক হয়ে বললাম- “ভিজিটিং কার্ড দেখে! দেখি একবার সেই কার্ড টি!”
কিছুক্ষণ পর একজন নার্স সেই ভিজিটিং কার্ড টা আমার হাতে দিলেন, আমি কার্ড দেখেই চমকে গেলাম। আরে এটা তো আমারই ভিজিটিং কার্ড। মনে পরে গেল, ট্রেনে লোকটাকে আমার ভিজিটিং কার্ড টা দিয়েছিলাম। আর সে তার মানী ব্যাগে ভরে নিয়েছে। ইসস সেই ভদ্র লোক মারা গেছে জানতে পেরে খুব দুঃখ পেলাম।
এতক্ষণে সব মামলা ক্লিয়ার হল, এরপর কিছু জেরা জুরির পর, হসপিটালের কেয়ার টেকার আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
কিন্তু আমার আর এখানে থাকা কিছুতেই উচিত নয়। কি জানি বাড়িতে কি কর্মকাণ্ড চলছে। তবে আমার মৃত্যুর কথা শুনে, আমার বডিটা আমার স্ত্রী নিতে চায় নি, শুনে খুব রাগ হল। ঠিক করলাম তাকে শায়েস্তা করতে হবে। বউ আমার অনেক বেড়ে গেছে।
সেদিনই ইমার্জেন্সি টিকিট কেটে পরেরদিন বিকেলে সোজা বাড়ি। নিজের গ্রামে পোটলা পুঁটলি নিয়ে ঢুকছি। পাড়ার লোক আমার দিকে কেমন যেন ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছে। আমি ভাবলাম, বিশু কাকার দোকানে এক কাপ চা খাই, রাত জাগার ক্লান্তি কাটাতে হবে। কাকার দোকানে যেতেই, কাকা আমাকে দেখে- “ভূ ভূ উউউউউ” করতে করতে ধপ করে মাটিতে পরে গেল।
যা শ্লা জল জ্যান্ত একটা মানুষ সামনে দাঁড়িয়ে আর ভূত ভাবছে, দোকান থেকে বেড়িয়ে গেলাম। রাস্তা যেইই আমাকে দেখে, সেইই আতঙ্ক হয়ে দেখছে।

আমার বাড়ির দিকে যেতেই দেখি, আরি সাব্বাস বউ আবার আমাকে না জানিয়ে আমার মরার খবর পেয়ে অনুষ্ঠানও করছে। আমার তো মনে হচ্ছে সে আরেকটা বিয়ে করছে। আর আজ বিয়ে। বেশ ভাল দিনেই এসেছি বটে!
দেখি অনেক লোকের আনাগোনা, যেই তারা আমাকে দেখেছে, ‘আরে বাপরে’ বলে দে দৌড়। ধুর শ্লা এরাও তার মানে আমাকে ভূত ভাবছে।
আমি সবার উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বললাম- “ভাগ চোরের বাচ্চা গুলো, জ্যান্ত মানুষের শ্রাদ্ধ খেতে এসেছে। পালাবি নাকি সব কটার ঘাড় মটকাব।
বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখি, আমার মহামান্য গিন্নী, ঢং করে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছে আর বলছে- “কেন তুমি আমার জীবন শেষ করলে গো, কেন একাই চলে গেলে।“
এইসব শুনে মেজাজ টা চড়ে গেল, যে আমার জীবন নরক বানিয়েছে তার মুখে এই সব কতা কি মানায় কন তো!
এতক্ষণে আমার নজর পরল, আমার পিণ্ডদান চলছে, ওরে বাটপাড় পণ্ডিতের বাচ্চা, জ্যান্ত লোকের পিন্ডি দিচ্ছিস। রেগে গিয়ে দিলুম সব ঘট, পিণ্ডি লাথি মেরে গুড়িয়ে। আর উপস্থিত লোকগুলো যে যেদিকে পারছে ভূত ভুত করে পালাচ্ছে।
আর পণ্ডিত ব্যাটা আমার নাম ধরে বলছে, “আত্মা শান্তি পায়নি, আবার মন্ত্র পড়তে হবে।“
মেজাজ টা আরও খারাপ হয়ে গেল, পণ্ডিতের গলা চেপে ধরে বললাম- “ওরে বাটপাড় এখান থেকে পালাবি তো পালা, নইলে তোর পিণ্ডি আমি চটকাবো।“ এরপর পণ্ডিত পড়িমরি করে দে দৌড়, আমি চেঁচিয়ে বললাম- “আরে ওই পণ্ডিতের বাচ্চা তোর পুঁটলি টা তো নিয়ে যা।“
কিন্তু সেই পণ্ডিত আর পিছন ঘুরে তাকাল না, মাত্র কয়েক মিনিটে পুরো বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল। পড়ে রইল আমার গিন্নী, যে আমাকে দেখেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আমিও চান্স পেয়ে দিলাম তার উপর আমার পিণ্ড দানের জন্য নিয়ে আসা কলসি কলসি জল ওর উপর ঢেলে।
সে আর যাই হোক না কেন, নিজের চোখে নিজেরই শ্রাদ্ধ দেখলুম আজ।।
হাস্যরস পরিবেশনায়-
ভ্যাংলা মুখো
ভূতের গল্প পড়তে ভালোবাসেন! ঝটপট ক্লিক করে ফেলুন নিচের লিঙ্কে-
Discover more from intellectpedia
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
মারাত্মক দারুন দারুন হেসে পেটে খিল লেগে গেলো …..কি সুন্দর উক্তি মত লাইন গুলো😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂😂 জাস্ট মারাত্মক
হাসির গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত হলাম 💘💘