Spread the love

অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প টিতে প্রথমে পরিচয় তারপর ভালোবাসা শেষে ‘আমাকে বোঝে না’ এর ট্যাগ…ভালোবাসার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ রইল গল্পে।

অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্পঃ-

“সম্পর্কের মূল্য”

এই মিহি শোনো না … কোথায় যাচ্ছ , দাঁড়াও বলছি…

কিন্তু মিহি থামছে না , আর আজ তার ফিরে তাকাবার ক্ষমতা নেই , হারিয়ে ফেলেছে সে নিজেকে অতল গহ্বরে।

সদ্য সদ্য কলেজ শেষ করে মিহি একটা কম্পিটিটিভ এক্সাম এর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কোচিং জয়েন করেছিল। আর পুরোনো টিউশন স্যারের কথাতেই তার সেখানে ভর্তি হওয়া । বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ কি.মি দূরে সেই কোচিং সেন্টার , তাই যাওয়া আসা করতে অসুবিধা হলেও সে কোনোভাবে ঠিক ম্যানেজ করে নেয় । সুস্থ স্বাভাবিক জীবন টা তার নদীর স্রোতের মত চলতেই থাকে ।

হঠাৎ মরুভূমির মাঝে মরীচিকার দর্শনের ন্যায় তার জীবনেও ঘটে যায় একটা মরীচিকার অধ্যায়। যেটা দুর থেকে দেখতে সুন্দর মনে হলেও কাছে গেলে ক্যাকটাসের চেয়েও ভয়ংকর ।

মিহির জীবনে প্রেম আসে …. সে অনলাইন মাধ্যমেই ভালোবেসে ফেলে একটা ছেলেকে । পড়াশোনা সম্পর্কিত সেই গ্রুপটির মাধ্যমেই ছেলেটির সাথে তার পরিচয়। ধীরে ধীরে ইনবক্স থেকে কল লিস্টে ছেলেটি জায়গা করে নেয়। মিহিকে পড়া বুঝিয়ে বলা , অঙ্ক দেখানো , গ্রামারের ভুল সংশোধন দিয়ে শুরু করা কলের কথা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয় , একে অপরের করা ছোট ছোট ভুলগুলোকে সংশোধন করতে শুরু করে।

অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প
অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প

বন্ধুত্বটা তখন যেন অন্য সম্পর্কের মাত্রা চাইছে , তখনই মিহির জীবনে ঘটে যায় একটা চরম বিপর্যয়। পারিবারিক অশান্তির কারণ আলাদা হয়ে যায় তার মা বাবা , মা পাগল মেয়েটা মায়ের সাথেই বেরিয়ে পড়ে অজানা ভবিষ্যতের সন্ধানে ।

মিহি সবকিছুর মাঝেও তবে ছেলেটিকে কিছুই জানাতে ভোলেনি। সে তাকে ছোট ছোট বিষয় গুলিও নির্দ্বিধায় জানিয়ে , নিজের মনকে সান্ত্বনা দেই , আর যাই হোক ও তো আছে আমার সাথে। কিন্তু না , খারাপ পরিস্থিতি তে মিহি ভেবেছিল ছেলেটিকে পাশে পাবে , তার কাঁধে বল যোগানোর একটা ভরসা পাবে , তবে সে সমস্ত কিছুই হলো না , ছেলেটিও মিহির পরিস্থিতির কারণে তার রুক্ষ ব্যবহারের কারণ বুঝতে না পেরে , দিনের পর দিন শুরু করলো অশান্তি । সে সব বুঝেও অবুঝের মত মিহির সাথে খারাপ ব্যবহার করতেই থাকলো ।

ভেবে দেখুন তো মিহিও তো একটা মানুষ , সেও কি একসাথে সব প্রিয়জন দের দেওয়া আঘাত মেনে নিতে পারে!

মিহি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ল , তার মা শুরু করলো তার চিকিৎসা করানো কিন্তু কিছুতেই তার রোগ নিরাময় আর হচ্ছিল না। ছেলেটি এই অবস্থা তেও মিহিকে চেনার বা বুঝার চেষ্টা করলো না । কথায় কথায় বাকিদের সম্পর্ক ,বাকিদের গার্লফ্রেন্ড দের সাথে তুলনা করে সবসময় মিহিকে ছোট করতে শুরু করলো।

কষ্টের প্রেমের গল্প
কষ্টের প্রেমের গল্প

মিহি বারবার সম্পর্কের মাঝে বোঝাপড়া , একে অপরকে বোঝার যে ব্যাপারটা আনতে চেয়েছিল। সেগুলো সব ভ্রান্ত ধারণা , ধীরে ধীরে প্রমাণ করে দিলো ছেলেটি। সে মিহিকে নিয়ে আর সুখ শান্তি পাচ্ছে না সেটি সরাসরি বারবার জানিয়ে দিতে শুরু করলো ।

এসবের পর মিহির শারীরিক অবস্থার আরো পতন হলো। সে বাঁচাবার নয় নিজেকে শেষ করবার রাস্তা খুঁজতে শুরু করলো । কিন্তু কিছু করার আগেই তার চোখে সবসময় ভেসে উঠতো সেই ছেলেটির মুখ , তাই সে কিছু করতে গিয়েও করতে পারতো না । এভাবেই বেশ কয়েকটা মাস পেরিয়ে গেলো ।

মিহির তখন জীবনের প্রতি সমস্ত আসা শেষ। তখন সেই ছেলেটার সাথে সে মুখোমুখি দেখা করার সিদ্ধান্ত নিলো। অবশেষে তাদের দেখাও হলো , ছেলেটি ঠিক যতটা গোছগাছ হয়ে এসেছিল ,মিহি ঠিক তার বিপরীত একেবারে অগোছালো ভাবে উপস্থিত হলো তার সামনে। ছেলেটি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। সে যে মিহিকে কতটা ভালোবাসে সে সব কথা ধীরে ধীরে বলতে লাগলো ।

মিহির চোখ থেকে আসা জল তখন টপ করে ছেলেটির বুক পকেটে লাগলো । সে বলে উঠলো-
” এ কি মিহি তুমি কাঁদছ কেন !” আমি জানি আমি অনেক ঝগড়া করি অনেক উল্টো পাল্টা শুনাই তোমাকে , কিন্তু ওসব তো রাগের কথা বলো , ওগুলো নিয়ে কি তুমি মন খারাপ করেছ!

মুখ ফুটে মিহি আর বলতে পারলো না , মন খারাপ নয় মন নামের জিনিস টাই তার শেষ হয়ে গেছে। যা আছে সেটা শুধু ছাই। সে তো তার রাগ ঝগড়া গুলো নিয়ে কোনোদিন অভিযোগ করেনি , করেছে শুধু তার বলা তীক্ষ্ণ খারাপ কথা গুলিকে নিয়ে ,যেগুলো মিহি কখনোই মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।

dhoka khaoar golpo
dhoka khaoar golpo

মিহি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো , ছেলেটিও তার পেছন পেছন থামার জন্য বারবার দাঁড়াতে বললো, কিন্তু মিহি আর থামলো না , ছেলেটার জামা রক্তে ভরে গেলো। সামনে থেকে আসা একটা বড় গাড়ি পিষিয়ে চলে গেলো মিহিকে, আর রক্তের পিচকারি তে লাল হয়ে গেলো ছেলেটি বিবর্ণ হয়ে গেলো তার মুখ দু চোখ বেয়ে জল গড়াতে থাকলেও আর তার কিছু করার রইলো না। তার অজস্র অভিমান রাগের কথা তার বুকের মধ্যেই চাপা রয়ে গেলো । শুনার মানুষটা আর তার হয়ে রইলো না।

থাকতে দিও মূল্য প্রিয়
হারিয়ে গেলে কি বুঝবে মূল্য!!
থাকবে না কোনো লাভ তাতে
ক্ষতির ভাড়ার ভর্তি হলে
থাকতে হবে একা শেষে।।


আসলে বর্তমান দিনের ভালোবাসার এটাই মূল সমস্যা, কেউই কাউকে বুঝতে চায় না। প্রায় প্রতিটা মেয়ে ভাবে তাকে যে ভালবাসবে সবসময় সে যেন খুব ভালভাবে ট্রিট করে। কিন্তু তারও বোঝা উচিত যে, একটা মানুষ শুধু হাওয়াতেই পরিবর্তন হয়না। একাধিক কারনের মধ্যে হয়ত মেয়েটার কিছু ব্যবহারও দায়ী থাকতে পারে। সবাই নিজের দিকটা দেখবে এটাই স্বাভাবিক। তারাও আপনাকে নানান বাজে ভাবে বলবে এরপর আপনি যখন মুখ খুলবেন তখন পুরো বিষয়টা শুধুমাত্র আপনার জন্যই হয়েছে।

কাঁচি এর একটা অংশ যেমন কোন কিছু কাটতে পারে না, তেমনই শুধুমাত্র একজনের জন্য কোন সম্পর্কে অবনতি আসে না। যেদিন সবকিছুর উপরে ‘শুধু আমার’ নামক বিষয়টা এসে যাবে সেদিন হয়ত প্রতিটা লয়েল সম্পর্ক পূর্ণতা পাবে।।

গল্পের কলমে-

আলোরানি মিশ্র

এই গল্পটি আপনার ভালো লাগতে পারে-

হৃদয়ছোঁয়া প্রেমের শেষ পরিণতি



Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top