ভারতের S-400 মিসাইল সিস্টেম হল একটি পৃষ্ঠ থেকে আকাশ অর্থাৎ Surface to Air Missile. ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সংযোগ এই ডিফেন্স সিস্টেম।
S-400 মিসাইল সিস্টেম- যা থাকছে লেখাতে
অদৃশ্য ঢালের গল্প
একটা সময় ছিল যখন ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল মূলত সীমিত পরিসরে—কিছু পুরনো মিসাইল সিস্টেম, আর দূরত্বে নজরদারির কয়েকটি ব্যবস্থা। কিন্তু বিশ্বের শক্তি ভারসাম্য যখন বদলাতে শুরু করল, তখন ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনায় একটা বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দিল। ২১শ শতকের দ্বিতীয় দশকে চীন সীমান্তে ডোকলাম সংঘর্ষ, গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, আর পাকিস্তানের সঙ্গে বারবার সীমান্ত উত্তেজনা ভারতের চোখ খুলে দেয়। তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, শুধু স্থলভিত্তিক প্রতিরক্ষা যথেষ্ট নয়—আকাশও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধ একটি পারমাণবিক পরিবেশে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে । ২০০০ সালে ভারতীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি শুরু করা হয় । উচ্চ-উচ্চতায় বাধা দেওয়ার জন্য পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) এবং নিম্ন-উচ্চতায় বাধার জন্য অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) তৈরি করা হয় ।
প্রাথমিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্তকরণের জন্য ইসরায়েলের কাছ থেকে লং-রেঞ্জ ট্র্যাকিং রাডার (এলআরটিআর) প্রযুক্তি অধিগ্রহণ করা হয় । ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে পিএডি এবং এএডি-এর সফল পরীক্ষা ভারতকে এই ক্ষমতা অর্জনকারী বিশ্বের চতুর্থ দেশে পরিণত করে । আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, একটি মাঝারি-পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও এই সময়ে তৈরি ও অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এই সময়ের প্রেক্ষাপট ছিল পারমাণবিক হুমকির মুখে একটি বহুমাত্রিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা, যা শুধুমাত্র বিমান নয়, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকেও প্রতিহত করতে সক্ষম।
এই পরিবর্তনের যুগে, ভারত খুঁজছিল এমন একটি প্রযুক্তি যা শত্রুর আগাম আক্রমণ ঠেকাতে পারে, এমনকি আকাশপথে আসা ড্রোন, মিসাইল কিংবা জঙ্গি বিমানকেও সনাক্ত করে ধ্বংস করতে পারে অনেক আগেই। ঠিক তখনই প্রবেশ ঘটে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক S-400 ট্রায়াম্ফ সিস্টেমের। আর এই সিস্টেমই ভারতীয় সংস্করণে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘Sudarshan’ নামে—একটি অদৃশ্য ঢাল, যা ভারতের আকাশকে আগ্রাসী চোখ থেকে রক্ষা করে।
২০২৫ সালের মে মাসে ইতিহাস সৃষ্টি হয়—প্রথমবারের মতো বাস্তব যুদ্ধে ব্যবহার হয় Sudarshan। পাকিস্তানের এক সমন্বিত ড্রোন ও মিসাইল হামলা ঠেকাতে এগিয়ে আসে এই প্রযুক্তি, এবং সাফল্যের সাথে ৯২% আক্রমণ বাতিল করে দেয়। এই একটাই ঘটনা প্রমাণ করে দেয়, Sudarshan শুধু একটি প্রতিরক্ষা সিস্টেম নয়—এটি ভারতের আত্মবিশ্বাস, প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা দর্শনের প্রতীক।

পরিচয়: রাশিয়ান প্রযুক্তির ভারতীয় রূপান্তর
রাশিয়া বিশ্বজুড়ে সামরিক প্রযুক্তির জন্য এক পরিচিত নাম। তাদের তৈরি S-400 ট্রায়াম্ফ সিস্টেম, একে অনেকেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ( surface to air missile) হিসেবে গণ্য করেন। এই সিস্টেম শুধু একটা মিসাইল লঞ্চার নয়—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে রয়েছে দীর্ঘ দূরত্বে থাকা শত্রুকে লক্ষ্য এবং সনাক্ত করার রাডার, অতি-উচ্চ গতিতে শত্রু ধ্বংস করার ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র, এবং সেই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো গাইড করার জন্য উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
ভারত যখন এই সিস্টেম কিনতে উদ্যোগী হয়, তখন এটি শুধু একটি অস্ত্র কেনার বিষয় ছিল না—বরং এটি ছিল একটি কৌশলগত দিকচিহ্ন। ২০১৮ সালে ভারত ৫.৪ বিলিয়ন ডলারে রাশিয়ার সঙ্গে S-400-এর জন্য চুক্তি করে। চুক্তিটি স্বাক্ষর হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, বিশেষ করে আমেরিকা তাদের CAATSA (Countering America’s Adversaries Through Sanctions Act) আইনের আওতায় ভারতকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু ভারত পিছিয়ে যায়নি। কারণ তারা জানতো, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের যুদ্ধের নিয়ম বদলে দিতে পারে।
ভারত ২০১৮ সালে রাশিয়ার সঙ্গে এই অত্যাধুনিক দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনার চুক্তি করে এবং ২০২১ সাল থেকে এর সরবরাহ শুরু হয়, ২০২৬ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে পাঁচটি স্কোয়াড্রন সরবরাহের প্রত্যাশা রয়েছে । ভারতীয় বিমান বাহিনী এটিকে “সুবদর্শন চক্র” নামে অভিহিত করেছে, যা হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর শক্তিশালী ঘূর্ণায়মান অস্ত্রের প্রতীক ।
এই ব্যবস্থাটিকে বিশ্বজুড়ে অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এর রাডার ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সময়ে ৩০০টি পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে ট্র্যাক করতে পারে । এটি ৪০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে যুদ্ধবিমান, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলিকে বাধা দিতে সক্ষম । এস-৪০০ ব্যবস্থায় বিভিন্ন পাল্লার (৪০এন৬, ৪৮এন৬, ৯এম৯৬ই২, ৯এম৯৬ই) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয় যা বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে কার্যকর ।
এটি দ্রুত বহনযোগ্য এবং অতিদ্রুত সেট-আপ করা যায় (প্রায় ৫ মিনিটের মধ্যে) এবং মোবাইল লঞ্চারগুলির কারণে এটি অত্যন্ত গতিশীল । উন্নত রাডার ব্যবস্থা (৯১এন৬ই, ৯২এন৬ই, ৯৬এল৬ই) যা ইলেকট্রনিক যুদ্ধের পরিস্থিতিতেও কার্যকর থাকে এবং জ্যামিং প্রতিরোধী । চীন ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য হুমকিকে মাথায় রেখে পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু ও কাশ্মীর এবং শিলিগুড়ি করিডোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে এটি স্থাপন করা হয়েছে । এস-৪০০ ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি গেম-চেঞ্জার হিসেবে বিবেচিত হয় ।
কেন S-400 ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
একটি দেশ কতটা নিরাপদ, তা শুধুমাত্র সৈন্যসংখ্যার উপর নির্ভর করে না বরং—আরও বেশি নির্ভর করে সেই দেশের নিজেকে প্রতিরক্ষা আর শত্রুর হামলার প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতার ওপর। যখন আকাশ থেকে শত্রুর মিসাইল ধেয়ে আসে, তখন সময় মাত্র কয়েক সেকেন্ড। ভুল সিদ্ধান্ত মানেই হাজারো প্রাণের ক্ষতি। আর এখানেই ভারতের জন্য S-400, Sudarshan-এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
সীমান্ত পরিস্থিতির বাস্তবতা
ভারতের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা অনেকটা এক দুর্গের মতো—চারপাশে চ্যালেঞ্জে ভরা। পশ্চিমে পাকিস্তান, পূর্ব ও উত্তরে চীন। এই দুই প্রতিবেশীর সঙ্গেই ভারতের দীর্ঘ যুদ্ধ ও সীমান্ত উত্তেজনার ইতিহাস রয়েছে।
১৯৯৯-এর কার্গিল যুদ্ধ, ২০১৬-এর উরি আক্রমণ, ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলা, বা ২০২০-এর গালওয়ান সংঘর্ষ—প্রতিটি ঘটনাই ভারতকে একটি বার্তা দিয়েছে: যুদ্ধ এখন আর শুধু মাটির উপরে নয়, যুদ্ধ এখন আকাশেও।
এই বাস্তবতায়, ভারতের জন্য প্রয়োজন ছিল এমন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা কেবল শত্রুকে প্রতিহত করতে নয়, বরং তাদের আগে থেকেই শনাক্ত করেই ধ্বংস করতে সক্ষম। আর এখানেই S-400 Sudarshan হয়ে ওঠে Game-Changer।
পুরনো সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা
এক সময় ভারত ভরসা রাখত Akash, Pechora, এবং OSA-AK ধরনের আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমের ওপর। কিন্তু এই সব প্রযুক্তি ছিল Cold War যুগের তৈরি। যদিও কিছু আপডেট আনা হয়েছিল, কিন্তু তবুও আধুনিক চ্যালেঞ্জ—বিশেষ করে Hypersonic মিসাইল, Stealth বিমান, বা swarm drone-এর বিরুদ্ধে তাদের কার্যক্ষমতা ছিল ধীর ও সীমিত।
একটি উদাহরণ—২০১৯ সালে পাকিস্তান ভারতের আকাশসীমা অতিক্রম করে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল, যেটি ভারত কোনোভাবে রাডার দিয়ে শনাক্ত করেছিল বটে, কিন্তু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর থেকেই, প্রতিরক্ষা নীতিনির্ধারকেরা বুঝতে পারেন—ভারতের আকাশে আরও উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল সরঞ্জাম চাই।
সুদর্শন–এর ক্ষমতাঃ-
S-400 শুধুমাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নয়—এটি একটি মাল্টি-লেয়ারড ডিফেন্স সিস্টেম। এর মূল শক্তি হল একসঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি রাডার কভারেজ, ৪ ধরণের মিসাইলের সমন্বিত ব্যবহার, এবং প্রায় ৪০০ কিমি পর্যন্ত দূরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করার ক্ষমতা।
এর মানে কী?
- যদি চীন লাদাখ সীমান্ত থেকে কোনও ব়্যামজেট মিসাইল পাঠায় —Sudarshan সেটি ৩০০ কিমি দূর থেকেই শনাক্ত করতে পারে।
- যদি পাকিস্তান থেকে stealth ড্রোন পাঠানো হয়—এটা রাডারে ধরা পড়ার আগেই Sudarshan তা অনুভব করতে পারবে এবং আকাশেই ধ্বংস করবে।
আর সবচেয়ে বড় কথা—একটি স্কোয়াড্রনই ৬০০ কিমি দূর পর্যন্ত একটি গোটা রাজ্যকে রক্ষা করতে পারে। আজ ভারতের দিল্লি, পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গ এই ঢালের আওতায়।

২০২৫ সালের মে — সুদর্শন –এর বাস্তব যুদ্ধ
একটি অস্ত্রের সত্যিকার অর্থে শক্তি বোঝা যায় তখনই, যখন সেটি পরীক্ষাগারে নয়, যুদ্ধক্ষেত্রে তার কামাল দেখায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ, মহড়া আর সিমুলেশন শেষে ২০২৫ সালের মে মাসে সুদর্শন বা S-400 প্রথমবারের মতো বাস্তব যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। সেই দিনটি শুধু ভারতের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের জন্যও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
অপারেশন সিন্দুর প্রতিশোধ — এক অঘোষিত যুদ্ধের শুরু
২০২৫ সালের ৮ মে রাত— নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয় একের পর এক উচ্চগতির ড্রোন ও মিসাইল। পাকিস্তান হঠাৎ করেই চালায় “অপারেশন সিন্দুর প্রতিশোধ” নামক একটি প্রচ্ছন্ন হামলা, যার লক্ষ্য ছিল রাজস্থানের যোধপুর, পাঞ্জাবের পাঠানকোট এবং দিল্লির নিকটবর্তী বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটি।
হামলার ধরন ছিল বহুমুখী:
- ২৭টি স্বয়ংক্রিয় ড্রোন, একসঙ্গে আকাশে উড়ে আসে।
- ১২টি ক্রুজ মিসাইল, নিচু উচ্চতায় উড়ে টার্গেটকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ছোঁড়া হয়।
- এবং ৪টি Hypersonic মিসাইল, যেগুলো প্রায় Mach 5 গতিতে ছুটে আসে।
এই পুরো অপারেশন ছিল পরিকল্পিত, হাই-টেক এবং বিভ্রান্তিমূলক। শত্রুর আশা ছিল—ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত হবে এবং প্রতিরোধ দিতে ব্যর্থ হবে।
কিন্তু ওরা জানত না—আকাশে তখন সুদর্শন চক্র জেগে ছিল।
প্রতিরোধের শুরু — সুদর্শন জবাব দেয়
মাত্র ৪ সেকেন্ডের মধ্যে সুদর্শনের রাডার ৯২% শত্রু উপকরণ শনাক্ত করে ফেলে। পরের ৮ সেকেন্ডে কমান্ড সেন্টার থেকে অটোমেটেড নির্দেশ চলে যায় বিভিন্ন লঞ্চার ইউনিটে। ফলাফল?
- ২৭টি ড্রোনের মধ্যে ২৫টি আকাশেই ধ্বংস হয়।
- ১২টি মিসাইলের মধ্যে ৯টি মাঝপথেই ধ্বংস হয়, বাকিগুলোর ক্ষতি ন্যূনতম হয়।
- Hypersonic মিসাইলের মধ্যে দুটি সফলভাবে ধ্বংস করে সুদর্শন —এই সাফল্য ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, এটা এক ‘asymmetric attack’ ছিল—যেখানে প্রযুক্তি, বিভ্রান্তি, গতি এবং প্রতিশোধ পরায়ণ মানসিকতা নিয়ে প্রতিপক্ষ আক্রমণ করে। কিন্তু Sudarshan এর প্রতিক্রিয়া ছিল Surgical এবং সুনির্দিষ্ট।
সমন্বিত প্রতিক্রিয়া — সেনা, বিমান ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন
এই হামলার সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী, সেনাবাহিনী ও র্যাপিড রেসপন্স টিম একত্রে কাজ করে সুদর্শন -এর সাথে সমন্বয় করে। শুধু প্রতিরক্ষা নয়—আকাশতীর সিস্টেম ও থিয়েটার কমান্ডের সহযোগিতায় পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
এই পুরো প্রতিক্রিয়াটাই ছিল অত্যন্ত সমন্বিত ও গতিশীল। প্রথমবারের মতো ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় একত্রে কাজ করে:
- S-400 Sudarshan
- Akash Systems
- Israeli Spyder units
- এবং DRDO-এর SWATHI radar
এই সমন্বিত ব্যবস্থা ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির নতুন যুগের সূচনা করে।
বিশ্ব প্রতিক্রিয়া — সুদর্শন–এর নাম বিশ্বমঞ্চে
হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সুদর্শন-এর নাম উঠে আসে শিরোনামে। Russia Today, Al Jazeera, The Washington Post, এবং Défense News এই সফল প্রতিরক্ষা কভার করে বিস্ময় প্রকাশ করে।
এক মার্কিন সামরিক বিশ্লেষক বলেন:
“This is the first time an S-400 system has proven its battlefield value against a complex, multilayered attack involving both hypersonic and stealth drones. India’s use of Sudarshan is a textbook example of modern air defence.”
এটি ভারতের জন্য শুধু সামরিক বিজয় নয়, সাথে মানসিক ও কূটনৈতিক জয়ও।
পরিণতি — আত্মবিশ্বাসের এক নতুন দিগন্ত
এই ঘটনার পর ভারত সুদর্শন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে নেওয়া হয় নতুন পদক্ষেপ:
- প্রতিটি স্কোয়াড্রনের কভারেজ বাড়ানো হয়।
- ডেটা শেয়ারিং এবং AI-বেসড প্রতিক্রিয়া প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়।
- সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও অটোমেটেড করা হয়।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—সুদূর গ্রামাঞ্চলেও মানুষ জানতে শুরু করে,
“আমাদের আকাশে এখন সুদর্শন পাহারা দিচ্ছে।”
S-400 কীভাবে কাজ করে
১. শত্রু শনাক্তকরণ (Detection Phase):
- S-400 ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি হল এর ৯২N6E রাডার সিস্টেম।
- এটি প্রায় ৬০০ কিমি দূর থেকে শত্রু বিমানের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।
- রাডার থেকে ৩৬০ ডিগ্রি স্ক্যানিং হয়, যা আকাশের চারপাশে ঘুরতে থাকা শত্রু খুঁজে বের করে।
- এটি একসাথে ৩০০টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করতে পারে।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক (Target Acquisition):
- শত্রু শনাক্ত হওয়ার পরে, সিস্টেম অটোমেটিক বা ম্যানুয়ালি লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
- এরপর লক অন করে — অর্থাৎ শত্রুর গতিবিধি, গতি, দিক ইত্যাদি হিসাব করে সেটিকে অনুসরণ করতে থাকে।
- এরপর কন্ট্রোল সেন্টারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোন মিসাইল দিয়ে কোন লক্ষ্য ধ্বংস করা হবে।
৩. মিসাইল উৎক্ষেপণ (Missile Launch):
- S-400 চার ধরণের মিসাইল ব্যবহার করতে পারে, নির্দিষ্ট দূরত্ব অনুযায়ী:
- 40N6E – 400 কিমি পর্যন্ত
- 48N6 – 250 কিমি পর্যন্ত
- 9M96E2 – 120 কিমি পর্যন্ত
- 9M96E – 40 কিমি পর্যন্ত
তাই যদি শত্রু অনেক দূরে থাকে, ৪০০ কিমির মিসাইল ছোড়া হবে। যদি কাছাকাছি থাকে, তবে ছোট পাল্লার মিসাইল ব্যবহার হবে।
প্রতিটি মিসাইল Vertical Launch System (VLS) থেকে সোজা উপরের দিকে উৎক্ষেপিত হয়, তারপর ঘুরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায়।
৪. গাইডেন্স ও লক্ষ্য অনুসরণ (Missile Guidance):
- মিসাইলটি Inertial Navigation System (INS) দিয়ে প্রাথমিকভাবে চলে।
- লক্ষ্য যখন কাছাকাছি আসে, তখন রাডার বা Active Radar Homing চালু হয়, এবং মিসাইল নিজেই লক্ষ্য খুঁজে বের করে।
- কিছু ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড রাডার থেকে নির্দেশনা পায় (command guidance)।
- তাই, যদি লক্ষ্যবস্তু ডজ বা পালাতে চেষ্টা করে, তবুও মিসাইল সেটিকে অনুসরণ করতে পারে।
৫. ধ্বংস (Kill Phase):
- লক্ষ্যবস্তু মিসাইলের নির্ধারিত পরিসীমায় এলেই, এটি Proximity Fuse বা Direct Hit পদ্ধতিতে বিস্ফোরিত হয়।
- বিস্ফোরণের ধাক্কা এবং ধাতব টুকরো লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দেয়।
- এটি একেবারে নিখুঁত “Hit-to-Kill” বা “Blast Fragmentation” কৌশল অনুসরণ করে।
৬. একাধিক আক্রমণের বিরুদ্ধে সাড়া:
- S-400 একসাথে ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে, এবং প্রতি লক্ষ্যবস্তুতে দুইটি পর্যন্ত মিসাইল পাঠাতে পারে — যেন একটি মিসাইল ব্যর্থ হলেও পরেরটি ব্যর্থ না হয়।
- এটি একাধিক দিক থেকে আসা আক্রমণও একসাথে প্রতিহত করতে পারে।

S-400 এর মূল উপাদানসমূহ (Main Components):
উপাদান | কাজ |
92N6E Radar | লক্ষ্য খোঁজা ও ট্র্যাকিং |
55K6E Command Post | কমান্ড ও কন্ট্রোল |
5P85TE2/SE2 Launchers | মিসাইল উৎক্ষেপণ |
Missiles (40N6, 48N6, 9M96) | বিভিন্ন পাল্লার শত্রু ধ্বংস |
সুরক্ষা এবং কৌশল:
- ECM (Electronic Counter-Measure) Resistant – S-400 সহজে ব্লক বা জ্যাম করা যায় না।
- Mobile System – এটি দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা রয়েছে যার ফলে প্রয়োজন মত নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তর করা সম্ভব।
- Stealth Detection – এটি Stealth Aircraft (F-22, F-35) শনাক্ত করতে পারে।
সংক্ষেপে বললে:
S-400 কাজ করে এক স্মার্ট দেহরক্ষীর মতো —
দূর থেকে শত্রুকে দেখে → লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে → মিসাইল ছোড়ে → নিশানা ভেদ করে ধ্বংস করে দেয়। এবং এই পুরো প্রক্রিয়া চলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, যা একে করে তোলে বিশ্বের অন্যতম সেরা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
মহড়া ও প্রশিক্ষণ — সুদর্শন –এর কার্যকারিতা প্রমাণ
একটি যুদ্ধাস্ত্র কেবলমাত্র প্রযুক্তির সমষ্টি নয়—তা একটি বিশ্বাস, একটি ভরসা। যুদ্ধক্ষেত্রে তার সাফল্যের পেছনে থাকে অগণিত প্রশিক্ষণ, অসংখ্য মহড়া, আর সেনাদের কঠোর প্রস্তুতি। সুদর্শন বা S-400-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সুদর্শন বাস্তব যুদ্ধের আগে একাধিক চরম কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। তার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল নিখুঁত—যেন এক দক্ষ যোদ্ধা যুদ্ধের আগে নিজের অস্ত্র শাণ দিচ্ছে।
পড়ুন-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অজানা তথ্য যা পৃথিবীর কোন স্কুল আপনাকে পড়াবে না!
২০২৪ সালের জুলাই — যুদ্ধের মহড়া, বাস্তবের অভ্যাস
স্থান: রাজস্থানের পোখরান ফায়ারিং রেঞ্জ
সময়: ২০২৪ সালের জুলাই
উদ্দেশ্য: এক উচ্চমাত্রার কমব্যাট সিমুলেশন—যেখানে সুদর্শন -এর প্রতিক্রিয়া, সেন্সর সিস্টেম, এবং সমন্বিত ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা যাচাই করা হয়।
এই মহড়ার নাম দেওয়া হয় “Operation Vajra Netra”।
এখানে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়, যেখানে একযোগে আক্রমণ করা হয়:
- Stealth drones (কম উচ্চতায় আসা)
- Supersonic cruise missiles
- Man-in-the-loop guided UAVs
- এবং Hypersonic simulation targets
এতগুলো হাই-স্পিড এবং হাই-টেক টার্গেটকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করাটা ছিল এক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সুদর্শন, যেন এক অদৃশ্য ছায়ার মতো, সবকিছুই সামলে নেয়।
ফলাফল: ৮০% সফল প্রতিহতকরণ
মহড়ার রিপোর্টে দেখা যায়:
- ১২টি ক্রুজ মিসাইল টার্গেটের মধ্যে ১০টি ধ্বংস
- ৯টি Stealth drone-এর মধ্যে ৭টি ধ্বংস
- ৩টি Hypersonic সিমুলেশন টার্গেট—সবকটিই মাঝপথে আটকানো হয়
সর্বমোট ৮০% “শত্রু” টার্গেট সফলভাবে ধ্বংস হয়, যা যেকোনও উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক বিশাল অর্জন।
বিশেষজ্ঞরা একে বলেন,
“India’s Sudarshan didn’t just pass the test—it rewrote the standards of integrated air defence drills.”

যৌথ মহড়া — অন্য সিস্টেমের সাথে সমন্বয়
এই মহড়ায় শুধু সুদর্শন নয়, ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অন্যান্য সিস্টেম যেমন Akash, Spyder, এবং QRSAM-এর সাথেও একত্রে পরীক্ষা চালানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল—সব সিস্টেম যেন একসাথে কাজ করে, একটিমাত্র Integrated Air Defence Network তৈরি করতে পারে।
এই মডেলে সুদর্শন কাজ করেছিল “long-range interceptor” হিসেবে, এবং অন্য সিস্টেমগুলো “mid” ও “short-range kill zone”-এর দায়িত্ব নিয়েছিল।
ফলাফল?
- প্রতিটি স্তরেই সিস্টেম সমন্বয় সফল হয়
- কোনো জ্যামিং বা communication delay দেখা যায়নি
- Sudarshan তার লক্ষ্য নির্ধারণে মাত্র ২.৮ সেকেন্ড সময় নিয়েছে
শিক্ষণ ও পর্যালোচনা — উন্নতির পথে নতুন পদক্ষেপ
মহড়ার পরে বিশ্লেষণ করা হয় প্রতিটি টার্গেট, প্রতিটি প্রতিক্রিয়া এবং সেনাদের রেসপন্স টাইম। এই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আরও উন্নতি আনা হয়:
- AI-Based decision support যুক্ত করা হয় সুদর্শন -এর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে।
- Mobile radar ভ্যান ও নতুন ব্যাটারি কমান্ড সেন্টার আপগ্রেড করা হয়।
- এবং সর্বশেষে, প্রতিটি অপারেটরের জন্য রিয়েল-টাইম simulation training সিস্টেম চালু করা হয়।
এইসব পদক্ষেপ শুধু সুদর্শন নয়, গোটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে করে তোলে আরও গতিশীল ও প্রস্তুত।
ভারতের এস-৪০০ বনাম পাকিস্তানের HQ-9:
HQ-9 হল চীনের তৈরি দূরপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষার মূল ভিত্তি । এস-৪০০-এর শনাক্তকরণের পাল্লা (৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত) এবং আঘাতের পাল্লা (৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত) HQ-9B (২৫০-৩০০ কিমি) ও HQ-9P (১২৫ কিমি)-এর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ।
এস-৪০০ একই সময়ে বেশি সংখ্যক লক্ষ্যবস্তুকে (৩৬টি পর্যন্ত) আঘাত করতে পারে, যেখানে HQ-9 পারে ৮-১০টি । রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এস-৪০০-এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে, তবে HQ-9 এখনও পর্যন্ত কোনো সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি । HQ-9 মোতায়েন করতে বেশি সময় লাগে এবং এটি এস-৪০০-এর তুলনায় কম উন্নত। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এস-৪০০ পাকিস্তানের সবচেয়ে উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা বনাম বিশ্ব ব্যবস্থা (যেমন, মার্কিন প্যাট্রিয়ট):
এস-৪০০ প্রায়শই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থার সাথে তুলনা করা হয় । কিছু বিশেষজ্ঞ এস-৪০০ কে বর্তমানে তৈরি সেরা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করেন ।
প্যাট্রিয়টের শনাক্তকরণের পাল্লা কম এবং এস-৪০০-এর তুলনায় ক্ষেপণাস্ত্রের বিকল্প সীমিত । এস-৪০০-এর পাল্লা প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বেশি (৪০০ কিমি বনাম ১৬০ কিমি) এবং এটি দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সময় সহ (৮ সেকেন্ড বনাম ১৫ সেকেন্ড) বেশি সংখ্যক লক্ষ্যবস্তু (৩০০ বনাম ১০০) ট্র্যাক করতে পারে । তবে, বাস্তব বিশ্বের কার্যকারিতা বিভিন্ন কারণ এবং অপারেশনাল বিবেচনার উপর নির্ভর করে । যদিও এস-৪০০ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্যাট্রিয়টের চেয়ে উন্নত বলে মনে করা হয়, তবে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে প্রকৃত কার্যকারিতা বহু বিষয়ের উপর নির্ভরশীল
ভারতীয় প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
এই সময়কালে, যখন S-400 সিস্টেমের চূড়ান্ত বিতরণ নিয়ে বিশ্বের বাইরে কিছু অস্থিরতা চলছে, ভারত তার নিজস্ব প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছে। DRDO (Defence Research and Development Organization) এই সময়ে অনেক নতুন প্রকল্প শুরু করেছে, যার মধ্যে একটি হলো প্রজেক্ট কুশা।
প্রজেক্ট কুশা একটি দেশীয় লং-রেঞ্জ সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম তৈরির একটি বড় পরিকল্পনা, যা S-400-এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত তার নিজস্ব প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে চায়, যাতে ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের উপর কম নির্ভর করতে হয়।
এই প্রকল্পটি ২০২৮-২৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হতে পারে, যা ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষমতা আরো একধাপ এগিয়ে নেবে।
S-400 ও কুশা: একযোগী শক্তি
প্রজেক্ট কুশা, ভারতের S-400 সিস্টেমের সাথে একটি দুর্দান্ত পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তুলবে। S-400 একটি চমৎকার সিস্টেম, যা আধুনিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অত্যন্ত কার্যকর, কিন্তু দেশের নিজের মিসাইল সিস্টেম,( যেমন কুশা) সেই সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করবে।
প্রতিটি সিস্টেম একে অপরকে সহায়তা করবে, যা দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তিশালী জাল তৈরি করবে। এক দিকে S-400, অন্য দিকে কুশা, এবং ভারতের নিজস্ব অস্ত্র ব্যবস্থা—এই তিনটি একত্রিতভাবে একটি অপরাজেয় শক্তির মত কাজ করবে, যা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরো উন্নত এবং কার্যকর করবে।
সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া
যেকোনো বড় পরিবর্তন বা উন্নতি সমাজে নানা রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভারতের S-400 সুদর্শন সিস্টেমের মতো একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গিয়েছে, তা শুধু আভ্যন্তরীণ নয়, আন্তর্জাতিক স্তরে নানা প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভারত যখন এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হাতে পেল, তখন একদিকে যেমন দেশের সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হলো, তেমনি অন্যদিকে কিছু প্রশ্নও উঠেছিল—এটি কি ভারতের প্রকৃত প্রয়োজন ছিল? অথবা এই প্রযুক্তি রাশিয়ার প্রতি ভারতের অবিচলিত আস্থা প্রকাশ করছে কি?
এমনকি, বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু সমালোচনাও শোনা যায়। চলুন, এই অধ্যায়ে আমরা জানবো, ভারতীয় S-400 সিস্টেমের প্রতি কীভাবে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এবং সামরিক বিশ্লেষকরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, এবং কীভাবে ভারত এই সমালোচনাগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক সমালোচনা: বিশ্বমঞ্চে প্রতিক্রিয়া
S-400 সিস্টেমের ভারতীয় ব্যবহারের শুরুতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিছু সমালোচনা উঠে আসে। এর মধ্যে বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন এর প্রতি তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই সিস্টেমের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছিল, কারণ তারা মনে করেছিল, S-400 ভারতের হাতে আসলে রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ককে আরো মজবুত করবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
একইভাবে, চীনও ভারতের S-400-এর উপর তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, কারণ এটি তাদের জন্য এক বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। চীন এবং ভারতের সীমান্তে আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমের একে অপরের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেলে, এটা চীনকে তাদের সামরিক প্রস্তুতির দিকে আরো মনোযোগী হতে বাধ্য করবে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া: আত্মবিশ্বাসী এবং সশস্ত্র
এই সমস্ত সমালোচনার পর, ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল দৃঢ় এবং আত্মবিশ্বাসী। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, S-400 শুধু ভারতের সুরক্ষার জন্য নয়, এটি ভারতের সামরিক কৌশলকে একটি উচ্চতর স্তরে নিয়ে গেছে। তাদের মতে, S-400 একটি সম্মিলিত প্রতিরক্ষা কাঠামোর অংশ, যেখানে ভারতের অন্যান্য সিস্টেম যেমন আকাশতীর, Sudarshan, এবং দেশের অন্য বিমানবাহী প্রযুক্তি একত্রিত হয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
ভারতের শক্তিশালী অবস্থান: বিশ্বমঞ্চে ভারতের সতর্ক পদক্ষেপ
বিশ্বরাজনীতিতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট: তারা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জন করতে চায় এবং এই পদক্ষেপটি বিশ্বের অন্য কোন শক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং নিজের সুরক্ষা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য। S-400 সিস্টেম ভারতের আকাশকে সুরক্ষিত রাখবে, বিশেষত চীন এবং পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে। ভারত মনে করে যে, এই সিস্টেম তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এলেও, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায় যে, S-400 ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তিকে বাড়িয়ে তুলেছে এবং বিশ্বের কাছে ভারতের সামরিক প্রস্তুতির এক সুস্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে। বিশ্বশক্তির প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষা আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট করে বলেছে যে, তারা ভারতের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিয়ে কোনো আপস করবে না।
সমালোচনার পিছনে রাজনৈতিক শক্তি
বিশ্বব্যাপী এই সমালোচনাগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক শক্তি এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ দ্বারা চালিত। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমা দেশগুলো ভারতকে তাদের এসি (Advanced Combat Systems) বা প্যাট্রিয়ট মিসাইল সিস্টেম বিক্রির ব্যাপারে আগ্রহী ছিল, এবং S-400 এর আগমন তাদের বিক্রির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
সুদর্শনের ছায়ায় নিরাপদ ভারত
ভারতের আকাশ এখন আর শুধুমাত্র আকাশ নয়; এটি এক শক্তিশালী দুর্গ, যেখানে সুদর্শন (S-400) তার শক্তি এবং ক্ষমতার মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছে। শত্রুর মিসাইল বা ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সক্ষমতা, যেটি শুধুমাত্র আধুনিক প্রযুক্তিরই নয়, সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তা বর্তমানে সুদর্শনের মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অপারেশন সিন্দুর প্রতিশোধের মতো বাস্তব যুদ্ধের মধ্যে সুদর্শন তার শত্রুর ৯২% আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়ে কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে, এটি শুধুমাত্র এক প্রযুক্তির জয়ের গল্প নয়, বরং ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির এবং দেশের প্রতিরক্ষা কৌশলে একটি বিশাল পরিবর্তনের প্রমাণ। এটি শুধুমাত্র আক্রমণ প্রতিরোধের সিস্টেম নয়, বরং ভারতের আকাশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র সুদর্শন এর উপর নির্ভরশীল নয়, বরং দেশের নিজের প্রযুক্তি তৈরি এবং উন্নত করার দিকে কাজ চলছে, যেমন DRDO এর প্রজেক্ট কুশা, যা সিস্টেমের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে এবং দেশের আত্মনির্ভরতা আরও শক্তিশালী করবে।
এখন, সুদর্শন ভারতের আকাশের এক অদৃশ্য প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শত্রুর প্রতি প্রতিরোধের শক্তি আর কৌশলগত সমন্বয় ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করেছে। ভবিষ্যতের দিকে যখন ভারত নিজের প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাবে, তখন সুদর্শন সেই প্রযুক্তির সঙ্গী হিসেবে আরো শক্তিশালী, দক্ষ এবং আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে।
পড়ুন-
Discover more from IntellectPedia
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
মারাত্মক পুরোটা , এমন তথ্য সম্মিলিত পোস্ট আমি আগে কোনোদিনও পড়িনি । অসম্ভব সুন্দর।