Spread the love

সাহসী চার বন্ধুর সাথে ঘটে যাওয়া ভয়ানক ভূতের ঘটনা নিয়েই আজকের ভয়ঙ্কর ভূতের গল্পটি।

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প- “সেই রাত”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া চার বন্ধু অভিক রুদ্র তিয়াসা আর লাবণ্য। তারা শুধু ক্লাসে ভালো রেজাল্টের জন্যই পরিচিত নয় বরং তাদের আলাদা একটি পরিচয় আছে। তারা YouTube এ একটি হরর ডকুমেন্টারি চ্যানেল চালায়।

ওদের কাজ ভারতের নানা পরিত্যক্ত জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে তার ইতিহাস লোক কথা আর যদি সত্যিই কিছু অলৌকিক থাকে, তার ভিডিও তৈরি করা। গত তিন বছরে তারা অনেক ঘুরেছে কিন্তু এবারে তাদের জীবনে যা ঘটতে চলেছে তা তাদের জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

অভিক ছিল তাদের এই দলের গবেষক। লাইব্রেরি ঘাটতে ঘাটতে একদিন সে খুঁজে পেল নবীনপুর নামে এক অজানা গ্রামের কথা। গ্রামটা ছিল মুর্শিদাবাদ এর এক গভীর জঙ্গলের ভিতরে। একটি রিপোর্টে লেখা নবীন পুরের হরিশংকর হাভেলি আজও অভিশপ্ত, কেউ নাকি সেই হাভেলিতে প্রবেশ করে না, আর যারা প্রবেশ করেছে তারা কখনো আর ফিরে আসেনি।

ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প
ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প

রুদ্র চিরকাল বাস্তববাদী ছেলে। সে বলল ভাই ভূত পুত এইসব একেবারে ফালতু, তবে পুরোনো হাভেলি দেখতে দারুণ হয়। যা এক কথায় অসাধারণ লাগে।
লাবণ্য আর তিয়াসা একই সুরে বলে উঠলো চলনা একবার গিয়ে দেখে আসা যাক!

পরেরদিন ট্রেনে চেপে জায়গাটিতে পৌঁছতে প্রায় ছয় ঘণ্টা লেগে গেছে। জায়গাটি কেমন যেন পুরোনো দিনের মতো। দেখলে মনে হবে জায়গাটি যেন এখনো প্রায় ১০০ বছর পিছিয়ে আছে। কাঁচা রাস্তা, শুয়ো পোকায় ভরা গাছ আর দূরে দেখা যায় একটা বিশাল ধূসর রং এর অট্টালিকা।

হাভেলির দিকে তাদের যেতে দেখে গ্রামের পণ্ডিত শ্যামাপদ মুখুজ্জে তাদের বললেন যে তারা কোথায় যেতে চায়! চার বন্ধু বলল যে তারা হাভেলিতে কয়েক রাত কাটাতে চায়। কথাটি শোনা মাত্র পণ্ডিত মশাই ঢোক গিলে বললেন ওই হাভেলিতে যেও না, ওই হাভেলি অভিশপ্ত।

তোমাদের মত অনেকেই ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ ফিরে আসেনি। মানুষ খেকো ওই হাভেলিতে যারা ঢুকে তারা আর ফিরে আসে না। জমিদার হরিশংকরের স্ত্রী আর ওর কন্যা ওখানেই আগুনে পুড়ে মরে ছিল। তাদের আত্মা এখনো সেই হাভেলিতেই রয়েছে ওরা বিশ্বাসঘাতক।

অভীক হেসে বলল “পন্ডিতমশাই আপনার বলা এই গল্পটি আমরা ইউটিউবে দেব হা হা হা।”

শ্যামাপদ বাবু বললেন “ভগবান তোমাদের সুবুদ্ধি দিক তোমরা ওই বাড়িতে যেও না।”

কিন্তু শ্যামাপদ বাবুর কথা উপেক্ষা করেই চার বন্ধু হাভেলির দিকে পা বাড়াতে লাগলো।

এদিকে সন্ধ্যা হতে লাগল। হাভেলির সামনে দাঁড়িয়ে ওদের প্রত্যেকের গা ছমছম করে উঠলো। বিশাল লোহার গেটটি খোলাই রয়েছে, যেন তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ভিতরে থাকা মানুষজন। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল এক অদ্ভুত পরিবেশ, কেমন একটা অদ্ভুত শীতলতার শিহরন তাদের শরীরে খেলে গেল। দেওয়ালে ধুলো জমে রয়েছে থরে থরে। একটা বড় ড্রয়িং রুম আর মাঝখানে ছেঁড়া সোফা, পাশে আয়নায় লাগানো শোকেস।

তারা ভিতরে গিয়ে দেখল প্রতিটি ঘরেই ঝাড়বাতি জ্বলছে। তিয়াসা হেসে বলল “এই বাড়িতে নাকি ভূতের বসবাস কিন্তু এ যে আলোর বন্যা!”

তারা একটি রুমে গিয়ে বসলো। রুদ্র বলে উঠল- “এই সুন্দর বাড়িতে কীভাবে ভুতের বসবাস হয়! কত কুসংস্কার মানুষের মনে ঘিরে রয়েছে হা হা হা ।”

তিয়াসা চেচিয়ে বলল- “হ্যালো ভূত মশাইরা আপনারা কোথায়! আপনাদের সাথে ভিডিও বানাবো বলে এসেছি আমরা।”

অভিক নাকি সুরে বলে উঠল- “ আমরা দেখা দেব না” এরপর চার বন্ধু হো হো করে হেসে গড়িয়ে পরল।

এরমধ্যেই তারা সঙ্গে আনা কিছু চিপস আর কোক খেয়ে রাত কীভাবে কাটাবে সেটি পরিকল্পনা করছিল।

ঘড়িতে কাটায় কাটায় তখন রাত ১২। জ্বলতে থাকা ঝাড়বাতিটা কয়েকবার ব্লিঙ্ক করে নিভে গেল। লাবণ্য বলল “লোড শেডিং এর আর সময় পেল না।”

এরপর ওরা হাতে টর্চ নিয়ে বাড়িটি ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিলো। দ্বিতীয়তলার করিডরে তিয়াশা দাঁড়িয়ে ছিল আয়নার সামনে। তার চোখ স্থির, ঠোটে অদ্ভুত হাসি। আয়নায় দেখা গেল সে নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু প্রতিচ্ছবির চোখ তিয়াশার দিকে নয়, সেটির চোখ পিছনের একটা ছায়ার দিকে।

ভয়ানক ভূতের ঘটনা
ভয়ানক ভূতের ঘটনা

পরের দিন অভিক বলল- “তিয়াশা তোর চোখ মুখ এত ফুলে গেছে কেন! আর তুই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি দেখছিলি!”

তিয়াশা বলল- “রাতটা অত ভালোভাবে মনে নেই। শুধু মনে আছে, আয়নার ভিতর একটা মেয়ে আমাকে বলছিল- ‘তুই এসেছিস আমার খেলা দেখতে?’”

রুদ্র বলল- “ঘুমের ঘোরে কিসব দেখেছিস আর কিসব বলছিস তুই নিজেও জানিস না। আমরা কালকে তোকে অনেকবার ডেকেছি কিন্তু তুই আয়নার সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমানো তোর অভ্যাস, তাই তোকে আর আমরা ডাকি নি।”

এইভাবে গল্প করতে করতে দিন পেরিয়ে গেল। সেদিন রাতে রুদ্র ও লাবণ্য ছাদে গিয়েছিল ড্রোন চালিয়ে জায়গাটির একটা ভিডিও রেকর্ড করার জন্য। হঠাৎ লাবণ্য থমকে দাঁড়াল।

-“তুই পোড়া গন্ধ পাচ্ছিস?”

-“হ্যাঁ… এটা তো মানুষের শরীর পুড়ে যাওয়ার গন্ধ।”

-“আশেপাশে কোনো শ্মশান আছে হয়ত!”

-“চল চল কাজে মন দে।”

ছাদের এক কোণে একটা ঝুল বারান্দা ছিল। ওদের নজর সেই বারান্দায় গেল। তারা দেখতে পেল সেখানে একটা ছোট্ট মেয়ে বসে আছে- কালো ছুল, সাদা পোশাক, চোখ আগুনের মত লাল।

-“একি বাচ্চাটা এখানে কোথায় থেকে এলো!”

মেয়েটি বলে উঠল- “তোমরা আবার বিনা অনুমতিতে আমার বাবার বাড়ি দেখতে এসেছ!”

এদিকে একটি দমকা হাওয়া বয়ে গেল, সেই হাওয়ার তেজে ড্রোনটি ছাদের এক কোণে ছিটকে পরল। দুই বন্ধু ড্রোনের দিকে দেখল কিন্তু এরপর সেই মেয়েটিকে তারা আর দেখতে পেলো না। তারা ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি সবার সাথে ফিরে এলো। বাকিদের ঘটনাটি জানাতেই রুদ্র বলে উঠল চল দেখা করে আসি ছোট্ট বাচ্চাটির সাথে।

এরপর তারা সবাই যখন উপরে গেল, ওরা দেখল বাচ্চাটির জায়গায় পরে আছে একটি পুরোনো পুতুল। সেটি দেখে রুদ্র বলে হো হো করে হেসে উঠে বলল- “তোরা সামান্য পুতুল দেখে এইভাবে ভয়ে… হা হা হা।”

সেদিন রাতে তারা ক্যামেরা চালু রেখেই ঘুমিয়ে পরে। পরের দিন সকালে উঠেই দেখা যায় অভিক নিখোঁজ। অনেক খুঁজেও তাকে আর পাওয়া গেল না। শেষে তারা ক্যামেরা ফুটেজ দেখার সিদ্ধান্ত নিল।

ফুটেজে দেখা যাচ্ছে- অভিক রাতে একটি ছায়ার পিছনে পিছনে চলে যাচ্ছে। ছায়াটি পরিষ্কার ভাবে বোঝা না গেলেও এটি পুরো বোঝা যাচ্ছে যে, অনেকটা আগুনের ছায়া যেমন হয় ঠিক তেমনই একটি ছায়া সেই দেহ রূপী ছায়ার মাথায় আছে।

ভিডিও ফুটেজ দেখে তিন বন্ধু বাক্রুদ্ধ তাদের জীবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন তারা হয়নি। তাদের মুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তারা দেখে অভিক সেই ছায়াটিকে অনুসরণ করতে করতে পাশের রুমে ঢুকল, এরপর দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ সাথে সাথে অভিকের করুন চিৎকার। কিন্তু আশ্চর্য! ক্যামেরা তে শব্দ রেকর্ড হলেও তিন বন্ধুর কেউই কোন শব্দ রাতে শুনতে পারে নি। তারা তিনজন দৌড়ে সেই রুমের দরজা খুলতে যায় কিন্তু সেই দরজা খুলতে তারা ব্যর্থ হয়।

এরপর ওরা ওখানে থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু হাভেলির সব দরজা বন্ধ হয়ে যায় নিজে থেকেই। অনেক চেষ্টা করেও তারা দরজা খুলতে পারে না। তাদের সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ!

দরজা গুলি যেন পাথরের মত জমে গেছে। শুধু যে রুমে ওরা ছিল সেই রুম বাদে বাকি সব রুমের দরজা বন্ধ। ওরা সবাই আবার সেই রুমেই ফিরে আসে। রুমে ঢুকার সাথে সাথে দরজাটি প্রচণ্ড শব্দ করে বন্ধ হয়ে যায়।

ভয়ে তিনজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আর ঠিক তখনই একটি অদ্ভুত হাসি শুনতে পাওয়া যায়- “কিরে এত ভয় পাচ্ছিস কেন তোরা! রাত কাটাবি না আমাদের বাড়িতে! হা হা হা হা।”

হঠাৎ করেই পিছনের দরজা খুলে যায় আর দরজা থেকে সেই ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটি বেরিয়ে আসে। তার হাতে জ্বলন্ত আগুন। সে লাবণ্যের দিকে সেটি ছুড়ে মারার সাথে সাথে লাবণ্যের গোটা শরীরে আগুন লেগে যায় আর ছোট্ট বাচ্চাটি সমানে হাসতে থাকে। এরপর এক অদৃশ্য শক্তি লাবণ্যকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে সেই খুলে থাকা দরজার রুমে। করুন সুরে লাবণ্য সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে।

এরপর রুমের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায় চিৎকার। এদিকে রুদ্র ও তিয়াশা চোখের সামনে এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হয়ে ভয় আর আতঙ্কে কাঠ হয়ে গেছে।
রুদ্র সাহস জুগিয়ে সামনের কাঁচের জানালা তে লাথি মারার সাথে সাথে জানালাটি ভেঙ্গে যায়।

তিয়াশা আর রুদ্র সেই জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। কিছুদূর এসেই রুদ্র থমকে দাঁড়ায়। তিয়াশা তাকে বলে- “থামলি কেন! চল পালা পালা।” কিন্তু রুদ্রের মুখে কোনো কথা নেই।

হঠাৎ করেই রুদ্র কান ধরে দাঁড়িয়ে পরে বলতে শুরু করে – “আমি বাঁচতে চাই …. আমি কিছু করিনি… আমায় মাফ করো।”

তিয়াশা বলে- “কার সাথে কথা বলছিস তুই! তাড়াতাড়ি পালা এখান থেকে।“ কিন্তু রুদ্র চিৎকার করতে করতে আবার সেই হাভেলির দিকে দৌড়ে যেতে থাকে। তিয়াশা দ্রুত সেখানে থেকে পালায়।

রহস্যময় ভূতের গল্প
রহস্যময় ভূতের গল্প

পরের দিন সকালে হাভেলির মূল দরজার উপর রুদ্রের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তার মুখ বাদে সমগ্র শরীর পুড়ে গেছে।

তিয়াশা বেঁচে ফিরলেও সে আর স্বাভাবিক নয়। তার স্থান হয়েছে মানসিক হাসপাতালে। সে যে রুমে আছে সেই রুমের দেওয়াল সে ভরে দিয়েছে আগুনের ছবি একে।

গল্পের তুলিতে-

অসীম পাল


চাইলে এই রহস্যময় ভূতের গল্পটিও পড়তে পারেন-

বাস্তবে ঘটে যাওয়া ভয়ানক ঘটনা- ভুতানুটি


Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top