Spread the love

এই বাংলা ছোট গল্প টিতে সময়ের সাথে সাথে সম্পর্কের বদল আবার রক্তের টানের চেয়ে হৃদয়ের টানের এক অসাধারণ কম্বিনেশন ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।

বাংলা ছোট গল্প – ‘রক্তের টান’

দিদি আবার অসুস্থ হতেই চিন্তার পাহাড় মাথার ওপর ভেঙে পড়লো এমন দিনে অদ্রি এসে হাজির । ছোট বেলায় ও আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। আজ পূর্ণ যুবক হয়ে ফিরেছে , আশার আলো জোৎস্না নিয়ে ও ফিরে এল আমাদের জীবনে। ওকে দেখে দিদি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছে। ঈশ্বর বোধহয় এত দিনে মুখ তুলে তাকালেন। নয়তো আমি বারবার ভাবতাম কি পাপ করেছি যে আমার জীবনটা অভিশাপের মতো কেটে গেলো।

আমি মানব মন্ডল। এ অঞ্চলে মন্ডল বাড়ির কথা সকালে জানে। এই অঞ্চলের অধিকাংশ জমি আমাদের। তবে বাওয়ালি মন্ডল দের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। মন্ডলরা সাধারণত পৌন্দ্র ক্ষত্রিয়। রাজাদের সৈন্য বা জমিদারের লেঠেল হতো। আমাদের পূর্ব পুরুষ কালীচরণ ছিলেন জোতদার। তাই বংশধর হিসেবে আমি বহু জমির মালিকানা পেয়েছিলাম।

কলকাতা শহর বড় হচ্ছে দিনে দিনে। এই অঞ্চল হঠাৎ করে পৌরসভার মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া হলো। তখন আমার সামনে একটা বড় সুযোগ চলে এলো। খুব ছোট বয়সে প্রোমোটার ব্যবসা শুরু করতে কোন বেগ পেতে হলো না। কাঁচা পয়সা আমদানি হতেই একটু বাঁচাল হলাম। অমনি আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন বাবা নীলাঞ্জনার সাথে।

বাংলা ছোট গল্প
বাংলা ছোট গল্প

নীলাঞ্জনা বিয়ে সময় একটি শর্ত দিয়েছিলো যে সে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। সেই সূত্রেই অভিদার আনাগোনা শুরু হয় আমাদের বাড়িতে।

তবে অভিক দা নীলাঞ্জনার গৃহশিক্ষক পরিচয়ে এ বাড়িতে প্রবেশ করলেও। দিদির পূর্ব পরিচিত মানে প্রাক্তন প্রেমিক হিসেবে আশা যাওয়া করলো এই বাড়িতে।

দিদি কলকাতায় একটি বড় কলেজে পড়াশোনা করতো তখন অভিক দার সাথে পরিচয়। দিদি উচ্চাকাঙ্খী ছিল , বাড়ির সবার কাছে গোপনে রেখে সিনেমা জগতে কাজ করা শুরু করে। ওর কলেজের বন্ধু অভিদা ছিল স্ক্রিপ্ট রাইটার। তাই কাজে সূত্রেই ওদের বন্ধুত্ব এবং ঘনিষ্ঠতা।

দিদির জীবনে কি ঘটেছিল জানা নেই। বাড়িতে যখন ফিরলো তখন ভারসাম্য হীন। আমার বিয়ে পর অভিদা এ বাড়িতে আসতে শুরু করলো। দিদি ধীরে ধীরে সুস্থ হলো। বাড়ি থেকে দিদির সাথে ওর বিয়ে দিলাম। ওর একটা দাবি ছিল। ও প্রথম প্রথম ঘর জামাই ছিল।

পরে বিদেশে চাকরি করতে যেতে চাইলো। বাবা টাকা পয়সা দিয়ে ব্যবস্থা করলো। বিদেশে নাগরিকত্ব পেয়ে গেলো । আমাদের বাড়িতে খুশির হাওয়া দিদিকে অভিদা নিয়ে যাবে বিদেশে কিছু দিনের মধ্যেই। কিন্তু বাস্তবে ঘটলো উলটো। একটা বিপদের পাহাড় এলো আমাদের ওপর।

হঠাৎ করে জোড়া ডিভোর্স নোটিশ এল বাড়িতে। নীলাঞ্জনা আমাকে আর দিদি কে অভি দা, দিদির সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইলো। আমাদের কে জানালো হলো অদ্রি আমার ছেলে নয়। নীলাঞ্জনা ও অভি দার সন্তান হলো অদ্রি। ওরা বললো প্রয়োজনে অদ্রির ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক।

Bengali Short story
Bengali Short story

অদ্রি নীলাঞ্জনার কাছে কম থাকতো দিদির কাছে থাকতো ওর ছেলে হিসেবে। তাই বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে সন্তান বিচ্ছেদ ঘটনায় বেশি আঘাত পেলো। ও আবার অসুস্থ হয়ে পড়লো।

এদিকে বাড়ির সম্মান রক্ষা করতে আদালতে কোন বিরোধিতা করতেই দিলো না বাবা আমাদের। অদ্রিকে নিয়ে চলে গেলো ওরা‌। আমরা কখনো জানতে পারিনি, অদ্রির পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সব কাগজপত্র ওরা তৈরি করে নিয়েছিল প্রথম থেকেই। ওরা চলে গেলো বিদেশে।

অদ্রির ফিরে আসাটা স্বাভাবিক ভাবেই অবাক করার মতো ঘটনা। কিন্তু ওর ফেরাটা আমার কাছে আশীর্বাদ মতো। ওকে বললাম ” তুই একা ফিরে এলি কেন ওদের ছেড়ে?”

ও বললো ” রক্তের টানের চেয়ে হৃদয়ের টান বেশি বলে।”

গল্পের লিখনে-

মানব মন্ডল

এই গল্পটিও আপনার পছন্দ হতে পারে-

অসমাপ্ত কষ্টের প্রেমের গল্প- সময়ের মূল্য



Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top