প্রেম কষ্ট বিচ্ছেদ ও জঙ্গি হামলার উপর ভিত্তি করে লেখা এই অসমাপ্ত প্রেমের গল্পটি আপনার চোখে জল এনে দেবে। পড়ুন সত্য ঘটনার আদলে লিখিত এই বাংলা দুঃখের গল্পটি।
অসমাপ্ত প্রেমের গল্প- “শেষ ভিডিও কল”
এই শুনছো , কি গো ?
উফ্ , এই মানুষটাকে নিয়ে আর পারা গেলো না , কেন যে বারবার এরকম করো তুমি সত্যি বুঝি না।
ঠিক আছে আমিও তবে রাখলাম ফোন , ঘুমাও তুমি নাক ডেকে কুম্ভকর্ণ মহাশয় ।
ওপাশ থেকে সায়ন , ঘুমে আচ্ছন্ন গলায় বলে উঠলো , গুড নাইট পাগলি, তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো । বাবুর স্কুল আছে তো কালকে ঘুমিয়ে পড়ো ।
কিছুটা রাগ করেই সুমি ফোন টা রেখে দিলো। মনে মনে বলতে লাগলো দশ বছরের সম্পর্কের পর পরিবারের সাথে কত ঝামেলা করে তবে এই মানুষটাকে নিজের করতে পেরেছি । সর্ব গুণে নিপুণ এই মানুষটার সব ভালো হলেও কাল হচ্ছে এই ঘুম। এমনকি বিয়ে করতে এসেও, বাসর রাতে সবাইকে জাগতে বলে , নিজে দেদার ঘুমিয়ে পড়েছিল পাগল টা ।

এখন দেখতে দেখতে বিয়ের ৭ বছর পেরিয়ে গেছে , আমাদের একটা ছোট্ট ছেলে আছে , ওর নাম রিভু। বাবার সমস্ত গুণ এই ছেলের মধ্যে যেমন বর্তমান, ঠিক সেরকম বাবা ন্যাওটা ছেলে। বাবাকে কাছে পেলে আর কিছুই চাই না । এসব ভাবতে ভাবতে সুমি তার ছেলেকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ল ।
সায়ন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করে। আর কাজের জন্যই তার বাড়িতে খুব বেশি থাকা হয়ে ওঠে না । বিভিন্ন রাজ্য , দেশে ঘুরে ঘুরে তাকে কাজ করতে হয়। প্রথম প্রথম সুমির এই ব্যাপারে আপত্তি থাকলেও, পরে তাদের জীবনে রিভু আসায় ,সে সায়ন কে কিছু বলে না।
তবে এখনো তাদের সম্পর্কের বয়স একটুও বাড়েনি , সেই সম্পর্কের প্রথম দিনগুলোর মতই ফোন এ কথা বলা , একে অপরকে গুরুত্ব দেওয়া , সময় দেওয়া সব কিছু একেবারে অপরিবর্তিত আছে । এমনকি সায়ন এর ঘুমানো স্বভাবটাও।
বর্তমানে সায়ন তার অফিসের বসের সাথে কাশ্মীর গিয়েছে কাজে , তবে তার স্ত্রী পুত্র সাথে নেই বলে খুব একটা বাইরে ঘোরার শখ নেই। সে যতটা সম্ভব নিজের হোটেলেই থাকে বাকিবাদ অফিসের কাজ সারতে বেরিয়ে পড়ে অফিসে।
দিনটা ২২ এপ্রিল , সকাল থেকে প্রকাণ্ড রোদের তাপে দক্ষিণ বঙ্গের অবস্থা কাহিল অন্যদিকে কাশ্মীরের ঠান্ডা পরিবেশ এ জায়গাটা যেন আরো মনোরম হয়ে উঠেছে।
সকাল সকাল সুমি কল করে জেদ করতে শুরু করে, আজকে সায়ন কে বাইরে বেরোতেই হবে আর ভিডিও কলে তাকে সুন্দর পাহাড় আর পরিবেশ দেখাতে হবে। সায়ন প্রথমে না করলেও , বউ এর আর্জি ফেলার সাহস দেখায় না । সে তার বউ কে যাবো না বলে কল কাট করলেও। পরে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ে পেহেলগাম এর উদ্দেশ্যে। এই জায়গাটাকে নাকি মিনি সুইজারল্যান্ড বলা হয় , এই জায়গাটা দেখার শখ সুমির সেই কোন কলেজের সময় থেকে। তাই এই জায়গাটাতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সায়ন।

অফিসের গাড়িতে করে রওনা দিয়ে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যায়। এরপর সেখানে গেলে তার পরিচয় হয় সদ্য বিবাহিত একটি কাপল এর সাথে। যারা বিয়ের পরেই ভূস্বর্গ দেখবে করে পাড়ি দিয়েছে। তাদের সাথে গল্প করতে করতে , সে তার স্ত্রী এর ব্যাপারে তাদের জানায়। তারাও খুব উৎসাহিত হন সুমিকে দেখার জন্য , আর বলে এখান থেকে তারা সোজা ইউরোপ যাবে। সেখানেই শ্যাটেল হবে। তাই বৌদিকে নিয়ে অবশ্যই যেন একবার সে ইউরোপ ঘুরতে যায়।
তাদের মধ্যে অল্প সময়েই খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এমনকি সায়ন তাদের দুজনের কয়েকটি ভিডিও ও শ্যুট করে দেয়।
এরপর সে সুমিকে ভিডিও কল করে , কল করে প্রথমে সুমির সাথে একটু ইয়ারকি করার পর জানায় সে তার পছন্দের জায়গায় এসেছে , পেহেলগ্রামে ।
এটা শুনে আনন্দে আত্মহারা সুমি পুরো জায়গাটা তাকে ভিডিও কলে দেখাতে বলে। সায়ন ব্যাক ক্যামেরা অন করতেই , আর্মি পোশাক পরা কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে দেখে । আর তারা খুব সামনে এসেই কল টা কেটে দিয়ে, ফোন টা ভেঙে চুরমার করে দেয়।
সুমি তাড়াহুড়োর মধ্যে কিছু বুঝে উঠতেই পারে না , কলে সেটা কি ছিল? বাস্তব নাকি কল্পনা !
সে সায়ন সায়ন করে চিৎকার করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ।
পড়তে পারেন- এক হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া প্রেমের এই গল্পটিও
ঘণ্টা খানেক বাদে তার জ্ঞান ফিরলে , সে তার শাশুড়ির কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। বিছানা থেকে উঠে , সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাইলে নিউজ চ্যানেল থেকে শুনতে পায় –
” এক ঘণ্টা আগে কাশ্মীরের পেহেলগ্রাম টেরোরিস্ট অ্যাটাক এ প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন ” পর্যটকরা যখন নিজের মত করে আনন্দ উপভোগ করছিলেন , তখন হঠাৎ এই আর্মি এর পোশাক পরিহিত, ৫-৬ জন জঙ্গি ঢুকে পড়ে সেখানে। এলোপাতাড়ি গুলি চালানোর পর তারা হিন্দু ও মুসলিমদের আলাদা করে , এরপর বেঁছে বেঁছে হিন্দুদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করে ২৬ জনকে , বাকি এখনো কিছু জনের অবস্থা গুরুতর ।
সুমি বাকরুদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
পরের দিন কফিন আবৃত তার স্বামীর মৃত দেহ আসে। যেটা স্বপ্নেও কোনোদিনও কল্পনা করেনি সুমি সেটি আজ তার বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সে কিছুতেই মানতে পারে না , তার স্বামী মৃত। সে বারবার বলে , ও ঘুমাচ্ছে তোমার বুঝতে পারছ না। সায়ন ঘুমাচ্ছে…..
এই পাগল উঠো উঠো , দেখো এটা কিন্তু ইয়ারকি করার সময় নয় , উঠে সবাইকে ভুল প্রমানিত করে দাও। আমি জানি ঘুম পাগল তুমি , তুমি ঘুমাচ্ছ। যতক্ষণ না অব্দি তুমি উঠবে আমি তোমাকে এখান থেকে যেতে দেবো না কোথাও … না কোথাও না ….. কোথাও যেতে দেবো না , চিৎকার করতে করতে সুমি পাগলের মত আচরণ শুরু করে, সে এই কঠোর নৃশংস বাস্তব এর মুখে নিজেকেই হারিয়ে ফেলে ।
কফিনের ভেতর থেকে হয়তো সায়ন তখন একটাই কথা বলতে চাইছিল , “ভারত আমি বিচার চাই … তুমি আমায় বিচার দাও।” কোথায় আমার ১৪০ কোটির পরিবার ? তোমরা কি আবারো মোমবাতি জ্বালিয়ে , কয়েক পা হেঁটেই , এই নৃশংস হত্যার কথা ভুলে যাবে !

নাকি গর্জন করে কর্মের দ্বারা বুঝিয়ে দেবে , এই দেশ নেতাজি, ক্ষুদিরাম বসু , ভগত সিং এর দেশ যেখানে , দেশকে স্বাধীন করতে তারা আত্মবলিদান দিয়েছেন । সেই স্বাধীন দেশে দাড়িয়ে, আমরা হিন্দুরাই যে আজকে বড্ড অসহায়। বিচার চায় আমাদের এই অতৃপ্ত আত্মা । বিচার দাও ….
আর কত? আর কতদিন এইভাবে আমরা সইব?
ভারত শান্তির নীতি তে বিশ্বাসী বলে কি , জঙ্গি গোষ্ঠী ভুক্ত দেশ আমাদের হাতের পুতুল ভেবে বসবে। তারা যা করবে আমরা সেটাই মেনে নেবো!
আমরা কি নিজেদের নিয়ে এতটাই ব্যস্ত, যে দেশের জন্য আমাদের ভাববার সময় এই নেই?
না আর না , আর এই অবিচার মেনে নেওয়া সম্ভব না । জাগো হিন্দু জাগো … জাগো বাঙালি জাগো….. জাগো প্রতিটি ভারতীয় …. অনেক হয়েছে মেনে নেওয়া , এবার প্রতিশোধ এর সময় আগত । সমগ্র ভারত বর্ষ জাতপাত ধর্ম এর সীমা ভেদ করে শুধুমাত্র ভারতীয় এর পরিচয় এ জেগে ওঠো। আগুয়ান হও , রুকে দাঁড়াও। আমাদের পূর্বপুরুষদের চরিত্র যে আজ কাপুরুষের রূপ নেয়নি, প্রমাণ করো ।
অস্ত্রের উত্তর অস্ত্র তে দেওয়ার সময় আসন্ন…….
এক হও । ঐক্য আনো জাতির সীমা ভেঙে
ধর্ম ভুলে , পতাকা তুলো
ভারত জাতি এক হয়ে চলো
না থাকবে কোনো বৈষম্য
আমরাই আনব দেশের সাম্য ।
আলোরানি মিশ্র
গল্পের ভাবনায়-
Discover more from intellectpedia
Subscribe to get the latest posts sent to your email.