Spread the love

দার্জিলিং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ৬০০ শব্দের একটি শিক্ষামূলক রচনা। ভ্রমণ স্মৃতি, অনুচ্ছেদ ও অন্যান্য ভ্রমণ বিষয়ক লেখার জন্য উপযুক্ত।

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রচনা-

ভূমিকা-

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের ছুটোছুটি শরীরের ক্লান্তি সব কিছুকে সরিয়ে রেখে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে অনেক দিনের। অবশেষে সেই দিনটি হাজির। ভ্রমণ শুধু আমাদের শরীর এবং মনকে সতেজ করে না তার সাথে সাথে অজানা কে কাছে থেকে জানার একটি সুযোগ এনে দেয়। বইয়ের পাতায় শৈল শহর দার্জিলিং নিয়ে অনেক পড়েছি অবশেষে সেই বইয়ে পড়া কথা গুলিকে মেলানর সময় এসে গেছে। অনেক দিনের পুরোনো ইচ্ছে আজ পূর্ণ হতে চলেছে।

পরিকল্পনা-

গুমোট গরমে অবস্থা নাজেহাল, সূর্যের দাবদাহ থেকে প্রাণীদের বাঁচাতে গাছে থাকা অবশিষ্ট পোড়া পাতা গুলি ক্লান্ত প্রয়াস চালাচ্ছে। স্কুলের শিক্ষক আমাদের ক্লাসে এসে জানালেন যে, স্কুল থেকে দার্জিলিং ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হবে। কথাটি শোনার সাথে সাথে আমার আর আনন্দ রাখার জায়গা হয় না। এতদিন যে দার্জিলিং-কে বইয়ে পড়েছি, ছবিতে দেখেছি সেই শৈলরানি কে নিজের চোখে দেখব সেটি ভাবতেই আমি কেমন শিউরে উঠছি।

যাত্রার বর্ণনা-

অবশেষে হাজির হল সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি। সেদিন আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই রেডি হতে শুরু করি। মায়ের বানানো মোটা সোয়েটারটা ব্যাগে নিয়ে সাথে আরও কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাবার সাথে রওনা দিলাম স্কুলের উদ্দেশে। পৌঁছে দেখি প্রায় সবাই এসে গেছে। আমাদের শ্রেণি শিক্ষক আমাদের একত্রিত করে কি কি করণীয় আর কি কি করণীয় নয় সেটি ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেন। এরপর সবাই গাড়িতে চাপলাম। বাবাকে টাটা করে দিলাম আর গাড়ি তার গতি ধরে এগিয়ে চলল।

চারপাশে জীর্ণপ্রায় গাছপালা দেখতে দেখতে চলে এলাম শহর শিলিগুড়িতে। চারিদিকে বড় বড় অট্টালিকা আর গরমে নাজেহাল মানুষের ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে লাগলাম আমরা। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা জন কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে হাজির হলাম, সবুজের সমারোহ দেখে রোদে ঝলসে যাওয়া চোখ দুটো কিছুটা স্বস্তি পেলো। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আমাদের শিক্ষক বললেন গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে।

ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রচনা
ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রচনা

মাথা উঠিয়ে দেখলাম আমরা পাহাড়ের খুব কাছাকাছি এসেছি। পাহাড় টাকে অনেক বড় লাগছে সবুজে ভরে আছে চারিদিক। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো আবহাওয়াটা বদলে গেল। ঝলসে যাওয়া দেহটাতে এক কোমল শীতল আর্দ্র হাওয়া এসে আমাদের আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা জানাল। এরপর আমাদের গাড়ি ধীরে ধীরে পাহাড়ের রাস্তা বেয়ে উপরে উঠতে লাগল। পাহাড়ের উচ্চতা বইয়ে পড়লেও কখনো সামনে থেকে দেখি নি। কাজেই অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। পাহাড়ের মাঝে মাঝে মেঘ গুলো যেন কেউ লাগিয়ে রেখেছে।

বড় বড় গর্ত গুলি মেঘে পূর্ণ। যেন একটি কুলফি তে কেউ মেঘ বসিয়ে রেখেছে। মেঘের আনাগোনা শান্ত শীতল আবহাওয়া দেখতে দেখতে অবশেষে চলে এলাম শৈলরানি দার্জিলিং এর কোলে।

অভিজ্ঞতা-

দার্জিলিং এর চৌপথার মোড়ে নেমে গেলাম আমরা। এরপর শিক্ষক মহাশয় আমাদের একটি হোটেলে নিয়ে গেলেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে আমরা বেড়িয়ে পরলাম দার্জিলিং ভ্রমণে।

সবার প্রথমে আমরা, দার্জিলিং এর সেই বিখ্যাত চিড়িয়াখানায় গেলাম চিড়িয়াখানার সাথেই রয়েছে একটি জাদুঘর। একে একে বিভিন্ন বন্য প্রাণীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাদের শিক্ষক। রয়েল বেঙ্গল টাইগার এর ছবি দেখলেও বাস্তবে দেখার অনুভূতিটা আলাদা রকমের। দুটি ভালুক আমাদের দিকে দেখেছিল একে একে বন্য ছাগল, লাল পান্ডা, বিভিন্ন রকমের মাছ, কুমির, চিতা বাঘ, লেপার্ড সবার সাথে পরিচিত হলাম।

এরপর আমরা গেলাম জাদুঘরে। সেখানে দেখে অবাক হলাম পৃথিবীর প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী তেনজিং নরগে মহাশয়ের পর্বত আরোহণ সময়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদান গুলি দেখে। তার ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডার, কাটা যুক্ত জুতো, গ্লাভস, চশমা টুপি সব যত্ন সহকারে রাখা আছে। সেখানে হিমালয়ের ভাগ গুলির সাথে পরিচিত হলাম। কীভাবে পর্বত আরোহণ করতে হয় সেই সব বিষয়ে আমাদের জানান হল।

পাহাড় ভ্রমণ স্মৃতি

এরপর আমরা হাজির হলাম রক গার্ডেনে। পাহাড়ের মাঝে এত অপরূপ ঝরনা দেখে মন আনন্দে ভরে উঠছিল। এরপর হোটেলে ফেরার পালা। রাতের খাবার সেরে, সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন চোখ বুজে এসেছে বুঝিনি। ঘুম ভাঙল শিক্ষক মহাশয়ের ডাকে। তিনি তাড়াতাড়ি তৈরি হতে বলছেন কারণ আমাদের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাতে নিয়ে যাবেন তিনি। ভোর ৩.৩০ নাগাদ রওনা দিলাম আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। সামনে যে বিস্তৃত বরফে ঢাকা পাহাড় সেটিই নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটাতে এক রক্তিম আভা দেখতে পেলাম। ধীরে ধীরে সেই রক্তিম আভা আরও গাঢ় হতে লাগলো। অপরূপ এই দৃশ্য থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া মুশকিল। পরে শিক্ষক জানালেন সূর্যের আলো পরে সেটি এইরকম রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম হোটেলের দিকে।

উপসংহার-

অবশেষে বাড়ি ফেরার পালা। এই শান্ত সমারোহ ছেড়ে আবার সেই কোলাহল সূর্যের দাবদাহে পুড়তে যেতে মন চাইছিল না। কিন্তু আমাদের যে ফিরতেই হবে। আমরা সবাই গাড়িতে চাপলাম। দার্জিলিং কে বিদায় জানিয়ে ধীরে ধীরে পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়িটি রওনা দিল সমতলের উদ্দেশ্যে। কিছু দূর এসে পাহাড়ি পরিবেশের কোমলতা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সমতলের ঝলসানো পরিবেশে আবার সেই এক ঘেয়েমি জীবনের সূত্রপাত।


এই রচনাটি যেসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে- দার্জিলিং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ৬০০ শব্দের রচনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রচনা শিক্ষার্থীদের জন্য, ভ্রমণ স্মৃতি নিয়ে বাংলা রচনা, শিক্ষামূলক ভ্রমণ সম্পর্কে রচনা বাংলা ভাষায়। পাহাড় ভ্রমণ স্মৃতি।


Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top

Subscribe