Spread the love

আজকের হৃদয়বিদারক গল্পটির মূল কেন্দ্রে রয়েছে হারানো ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা যা রয়েছে গোপনে, কিছুটা অপ্রকাশিত।

অপেক্ষার শেষ প্রহরঃ- হারানো ভালোবাসার গল্প

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যাবেলা ,
ওর হাতে চায়ের পেয়ালা
আহা কী মারাত্মক দৃশ্য ….!

ধুর কি সব কল্পনার জাল বুনে চলেছি এই দীর্ঘ চার বছর ধরে!

এই এত কল্পনার মাঝেও কিছু বাস্তব এর ছোঁয়া পাওয়া কি আমি কখনও পাবো না ?

হারানো ভালোবাসার গল্প
হারানো ভালোবাসার গল্প

যদিও সে আমায় ভুল বুঝে অনেকটাই দূরে সরে গেছে , তাও আমি তাকে নিয়ে আজও কল্পনার জাল বুনে যাই ।

কে বলতে পারে, হঠাৎ একদিন দুয়ারের প্রান্তে দাঁড়িয়ে সে হাতছানি দিয়ে ডাকলো , আর মধুর কণ্ঠে ডেকে বলল , কই গো আমি ফিরে এসেছি , তুমি কই !
স্যার ,স্যার শুনছেন …. কেউ একজন এসেছে , আপনার খোঁজ করছে ।

বিশুর গলার আওয়াজে , আমি আমার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে বাস্তবে ফিরে এলাম ।

কি রে বিশু, কি হয়েছে ? কে এসেছেন , তাকে ভেতরে আসতে বল ।

না মানে ইয়ে স্যার , একজন মহিলা অনেকক্ষণ ধরে আপনার অপেক্ষায় , বাইরের কেদারায় বসে আছেন।

বিশুর এত কিন্তু কিন্তুর কারণ এতক্ষণে বুঝতে পারলাম । সে যাবার পর থেকে এযাবৎ আমি কোনো মহিলার সাথে দেখা তো দূরের কথা মুখ দর্শন ও করি না ।

অফিসের সমস্ত কাজ বাড়িতে বসেই মিটিয়ে ফেলি , মহিলা হইতে সাবধান বলেই হয়ত নিজেকে চার দেয়ালে বন্দী করে ফেলেছি। আর যার জন্য এমন সিদ্ধান্ত সেই আমায় ভুল বুঝে …।।

আবারো ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম বিশুর ডাকে ,
“কি স্যার ওনাকে কি ঘরে পাঠিয়ে দেবো ?”

“না বিশু শোন, এযাবৎ কোনো মহিলা তো আমার সাথে দেখা করতে আসেন না , তাহলে ইনি কে, যে তোর স্যারের জন্য অপেক্ষা প্রার্থী ।”
বিশু নিরাশ দৃষ্টিতে আমার মনের কথা বুঝতে পেরে বললো , “স্যার ম্যাডাম নন ইনি। অন্য কেউ …”

বিহ্বল ভাবে চেয়ে আমিও নিরাস দৃষ্টিতে বললাম , “যদি তোর মত তোর ম্যাডাম ও আমার মনের কথা গুলো পড়তে পারতো, তাহলে হয়ত আজ আমি এই চার দেয়ালে বন্দী হতাম না রে” তারপর হো হো করে একটা হাসি দিয়ে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলাম।

পৌঁছে দেখলাম একটি মধ্যম বয়ষ্কা মহিলা হাতে কিছু কাগজ পত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আমি যেতেই সে নমস্কার বলে , আমার নাম ধরে ডাকলো।

হৃদয়বিদারক বাংলা গল্প
হৃদয়বিদারক বাংলা গল্প

আমিও কৌতুক ছলে বললাম , আমার মত এক আঁতুড়ে সন্তানের নাম আপনি জানলেন কীভাবে। আর দেখে তো মনে হচ্ছে না , আপনি আমার পূর্ব পরিচিত,
মহিলা বললেন আজ্ঞে না , আপনি আমাকে না চিনলেও , আমি আপনাকে বেশ ভালো ভাবেই চিনি।”

সজাগ দৃষ্টিতে আমি জিজ্ঞাসা করলাম , “কেন আপনি কি গুপ্তচর, আর আমি কি দেশ দ্রোহী?”

“আরে না না , আপনি ভুল বুঝছেন। আপনি এতকাল যার জন্য অপেক্ষা করে গৃহ বন্দি, তার শেষ ইচ্ছা পূরণেই আমি আপনার নিকটে এসেছি। আর তার কাছ থেকেই আমি আপনার সম্বন্ধে জেনেছি। আর শুধু মাত্র আমি কেন ? এখন তো আপনাকে পুরো বিশ্ববাসী চেনে।”

এই বলেই সেই মহিলা আমার হাতে তুলে দিলো এক খানা ইংরেজি বই, যেটার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় করে লেখা “I KNOW WHO YOU ARE!”, পাতা উল্টেই আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম ,নজরে পড়লো আমার একটা ছবি , আর ছবির নিচে বইটির লেখিকার নাম ।

মুহূর্তের মধ্যে যেন আমার পায়ের মাটি সরে গেলো , কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতেই পড়ে গেলাম । বিশু আর ওই মহিলা আমাকে তুলে , কেদারায় বসিয়ে জল দেওয়ার কিছু বাদে একটু সুস্থির হওয়ার পর ওই মহিলা বলে উঠলো , “স্যার, আপনার স্ত্রী আপনাকে নিয়ে এই বই টি লিখেছেন , আর তার জন্য তিনি ভারত রত্ন পুরস্কার পেতে চলেছেন। কিন্তু পুরস্কার টি নেওয়ার জন্য তিনি আর এই পৃথিবীতে নেই।

ভুল বোঝাবুঝি গল্প
ভুল বোঝাবুঝি গল্প

তাই আমি তার শ্রেষ্ঠ ভক্ত হিসেবে , তার বই এর শেষ পাতায় লেখা তার শেষ ইচ্ছে আর তার মারণ রোগ এর জন্য আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার ব্যাপারটি পড়ে, সত্বর আপনার কাছে ছুটে এসেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় বইটি প্রথম কপি তিনি আপনার হাতে দিতে চেয়েছিলেন নিজের হাতে, কিন্তু সাহস করে আর ফিরতে পারেন নী।

তিনি লিখেছেন, যদি তার মারণ রোগের কথা আপনি জানতেন তাহলে আপনিও তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতেন , তাই তিনি আপনার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন , আপনার অজান্তেই তিনি মারণ ব্যাধির সাথে একাই লড়াই করে গেছেন দীর্ঘ সময় ধরে।”

“তবে স্যার একটাই প্রশ্ন , ভুল বোঝাবুঝি তো সবার মাঝেই হয় , তাই বলে আপনিও কেন একবারও ম্যাম এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন না ?”

আমার গলা থেকে শুধু দুটোই শব্দ বেরিয়ে এলো, ‘জেদ আর আত্মসম্মান।’

-আলোরানি মিশ্র

গল্পের ভাবনায়-



Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top

Subscribe