Spread the love

আজকের এই বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প শীর্ষক লেখাটি তে তিনটি সেরা শিক্ষনীয় গল্প রয়েছে। বাস্তব জীবনকে ঘিরে লেখা এই শিক্ষনীয় গল্প গুলি থেকে নতুন কিছু শিখবেন এই আশা রাখি।

বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্পঃ-

আজ থেকে অনেক কাল আগের কথা, তখনকার দিনে বর্তমানের মত এত গাড়ি ছিল না। এত রাস্তাঘাটও ছিল না। বাণিজ্য চলত জলপথের মাধ্যমে। তবে বর্তমান দিনের মত ইঞ্জিন চালিত জাহাজ নয়, তখন ছিল বাণিজ্য জাহাজ যেগুলি অনেকটা পালতোলা জাহাজের মত। কিন্তু আয়তন ও আকারে বড়। প্রযুক্তি অনুন্নত থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ত জাহাজ গুলি।

কৈলাসপুর গ্রামে একজন বণিক বসবাস করত। সে তুলোর ব্যবসা করত। সে দেশীয় তুলো বিদেশে বিক্রি করত আর বিদেশের মাটিতে প্রস্তুত বস্ত্র দেশে নিয়ে আসত। এরকমই একদিন সে বিদেশে গিয়েছিল। সেদিন বাজার বেশ চড়া ছিল, তাই ইনকাম টাও বেশ ভালোই হয়েছে। ইনকাম বেশী হওয়ায় সে তার একমাত্র কন্যার জন্য একটি মুক্তোর মালা কিনে তার সঙ্গে রাখে। এরপর যখন রাত হয়, তখন সে তার জাহাজ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

কিন্তু মাঝ সমুদ্রে গিয়ে তার মনে হল, আকাশের গতি ভালো নেই। সমুদ্রের ঢেউ গুলি উত্তাল হচ্ছে। দেখতে দেখতে রাতের অন্ধকারকে আরও ঘনিয়ে গাঢ করে তুলল আকাশের কালো মেঘ। শুরু হল উত্তাল হাওয়া। তার জাহাজ দুলতে লাগল। এটি দেখে তার কর্মচারীরা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল।

এবার বৃষ্টির সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল শিলাবৃষ্টি। একটি প্রকাণ্ড শিলা জাহাজের কিনারা বাড়াবর এসে পড়ে জাহাজকে ফুটো করে দিল। দেখতে দেখতে জাহাজের পাটাতনে একহাঁটু জল জমতে শুরু করল। সেই ব্যবসায়ীর সাথে থাকা কর্মচারীরা একে একে সমুদ্রে লাফ দিতে লাগল। একজন কর্মচারী ব্যবসায়ীর কাছে এসে বললেন- “মালিক প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমাদের সমুদ্রে লাফ দিতে হবে। ওই যে কাছেই একটি দ্বীপ দেখা যাচ্ছে, চলুন আমরা সাঁতরে সেখানে চলে যাই।“

এটি শুনে সেই ব্যবসায়ীটি বললেন- “আরে মূর্খ, আমার উপড়ে ভগবান আছেন। আমি প্রতিদিন তাকে পুজো করি। প্রতিবছর তাকে পশু বলি দিই। ভগবান থাকতে আমার কিছুই হবে না। আমি আমার এই বহুমূল্য জাহাজ ছেড়ে কোথায় যাবো না।“

বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প
বাস্তব জীবনের শিক্ষনীয় গল্প

জেদ করা বৃথা জেনে সেই কর্মচারীটিও সমুদ্রে লাফ দিয়ে সাঁতরাতে লাগল। দেখতে দেখতে জাহাজের সব কর্মচারীই সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ল, কিন্তু সেই ব্যবসায়ীটি ভগবানের নাম জপতে শুরু করে দিল। এদিকে জাহাজ প্রায় জলমগ্ন। ব্যবসায়ীটি জাহাজের মাস্তুল ধরে ঈশ্বরকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু তার ডাকেও ঈশ্বর সাড়া দিলেন না। জাহাজটির সাথে সাথে ব্যবসায়ীটিও ডুবে মারা গেলেন।

সুতরাং এই গল্পটির মধ্যে যে শিক্ষণীয় কথাটি লুকিয়ে রয়েছে সেটি হল- ভগবান বা ঈশ্বর তাকেই সাহায্য করেন যিনি নিজেকে সাহায্য করেন। আপনি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আপনার সমগ্র সম্পত্তি দিয়ে দিলেও ঈশ্বর আপনাকে বিন্দুমাত্র সাহায্য করবেন না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি নিজেই নিজেকে সাহায্য করার জন্য হাত বাড়াবেন।

সেরা শিক্ষণীয় গল্পঃ-

খাঁটি গ্রাম বলতে যা বোঝায় আরকি, বিলাশপুর গ্রাম ঠিক তাইই। সারাটা মাঠ জুড়ে সবুজে সবুজ। আর ধান পাকার সময়ে পুড়ো মাঠ হয়ে উঠে স্বর্ণালী, দূর থেকে দেখলে মনে হবে কেউ যেন সোনা বিছিয়ে রেখেছে। আর এই গ্রামেই দেখা যায় রংবেরঙের নানা জাতের পাখিদের আস্তানা। ফসল বোনার সময় হলেও পাখিরা ফসলের ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের বাসা বানায়। আবার কোনো কোনো পাখি গাছের ডালেই বাসা বানায়।

দেখতে দেখতে ফসল কাঁটার সময় হয়ে এল। এদিকে একজোড়া পাখী ফসলের ক্ষেতেই ডিম পেড়েছিল। কিছুদিন পড়েই ডিম ফুটে বাচ্চা বেড়িয়ে এল। কাছেই রয়েছে খাবার, আর চিন্তা কিসের, বিন্দাস খাও-দাও আর ঘুরে বেড়াও। কিন্তু বাচ্চারা এখনও উড়তে শিখেনি, আর এটাই হয়ে উঠেছে পাখী দম্পতির মাথা বাথার কারণ। আর কয়েক দিন পড়েই ক্ষেতের ফসল কাটা হবে, আর বাচ্চা গুলি এখনও উড়তে পাড়ে না। ফসল কেটে ফেললে তাদের আর থাকার জায়গা রইবে না যে।

একদিন পাখী দম্পতি বাইরে ছিল। তাদের বাচ্চারা ক্ষেতের মালিক কে বলতে শুনল- “বুঝলে রামু কাকা, আর দেড়ি করা চইলবেক নাই, আসমানের গতিক ভালো নই গো। কখন যে বৃষ্টি আসবে, আমাদের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে। আমি কাল মজুরকে আসতে কইব। কালই আমারে ফসল কাটতে হইবেক।“

এই কথা শুনে পাখির বাচ্চারা বেজায় শঙ্কিত হয়ে গেল, তার মা বাড়ি ফিরে আসলে তারা বলল- “মা, আমাদের বোধহয় আজই এখানে শেষ দিন, কারণ ক্ষেতের মালিক বলেছে কাল নাকি তারা ফসল কাটবে।“ তাদের মা বলল- “চিন্তার কোনো কারণ নেই বাচ্চারা, তোমরা আরামে থাকো, কাল ফসল কাটবে না ক্ষেতের মালিক।“

পরের দিন পক্ষী মায়ের কথা সত্য প্রমাণিত হল। কেউই ক্ষেতের ফসল কাঁটার জন্য এল না। সেদিন সন্ধ্যায় কৃষক আবার তার ক্ষেতে আসল এবং বিড়বিড় করে বলতে লাগল- “না দিনমজুরও ফাকি দিল, এবার আমার জামাইকে কাল আসতে বলব, ফসল কাঁটার জন্য।“

পাখির বাচ্চারা এই কথাটি তাদের মাকে বলার পর মা বলল- “উঁহু তোমাদের কোনো চিন্তা নেই, দেখবে কালও এই ফসল কাটা হবে না।“ আবার পুনরায় তাদের মায়ের কথা সত্যি প্রমাণিত হল। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে, তখন ক্ষেতের মালিক রাগে গজগজ করে এসে ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল- “না আর কাউকে তেল মেরে লাভ নেই, এবার আমাকে নিজেই কাজে নামতে হবে, না হলে সব ফসল যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কাল আমিই ফসল কাটব।“

এবার বাচ্চারা তার মায়ের দিকে তাকাতে মা বলল- “এবার আমাদের এই জায়গা ছেড়ে যেতে হবে, এখানে আর থাকা যাবে না।“ মায়ের মুখে এইরকম কথা শুনে বাচ্চারা কারণ জিজ্ঞাসা করল। এর উত্তরে মা বলল- “আমাদের অন্যত্র চলে যেতে হবে কারণ, এত দিন এই ক্ষেতের মালিক অন্যের ভরসায় ছিল, কিন্তু কাল সে নিজের ভরসায় আসবে, তাই আমরা আর এখানে থাকতে পাড়ব না।“

শিক্ষামূলক লেখা
শিক্ষামূলক লেখা

সেই রাতেই পক্ষী দম্পতি তাদের বাচ্চা নিয়ে অন্যত্র চলে গেল, দেখা গেল যে, পরের দিন সেই ক্ষেতের মালিক নিজেই এসে ফসল কাটছে।

এই গল্পটি থেকে আমরা যে শিক্ষণীয় কথাটি জানতে পাড়ি সেটি হল- “অন্যের সাহায্য গ্রহণ করা মোটেই খারাপ নয়। কিন্তু আপনি যদি সময়ের মধ্যেই কোনো কাজ শুরু করতে চান এবং নির্দিষ্ট সময়েই সেই কাজ শেষ করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের কাজের দায়িত্ব আপনাকে নিজেকেই নিতে হবে। তা না হলে অন্যের আশায় বসে থেকে, নেহাতই আপনার সময় নষ্ট ছাড়া কাজের কাজ আর কিছুই হবে না।

এই শিক্ষণীয় গল্পটি মিস করলে জীবনের অন্য দিকের শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে যেতে পারেন-

বাছাই করা তিনটি সেরা শিক্ষামূলক গল্প

জীবনের শিক্ষা মূলক গল্পঃ-

খাবারের সন্ধানে একটি পিঁপড়ে সকাল থেকেই টোটো করে ঘুরছিল। সে খাবার তো পেয়েছে, কিন্তু তার ইচ্ছে একটু অন্য রকমের খাবারের প্রতি তাই হন্যে হয়ে জঙ্গলময় ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে সে দেখল গাছের নীচে ঘাসের উপড়ে কিছু লাল-কমলা জিনিস পড়ে আছে।

অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে একটি পা বাড়িয়ে দিল সেদিকে। সে দেখল তার পা লেগে যাচ্ছে। উঁহু এটি মোটেই ভালো জিনিস নয়। আবার সে রাস্তা হাঁটতে শুরু করে দিল। নিজের অজ্ঞাতেই কখন যে সেই পা টি মুখে দিয়ে দিয়েছে, যখন তার বোধ হল সে থমকে দাঁড়াল। একি তার পা এত মিষ্টি কেনো? উফ দারুন লাগছে এই মিষ্টি টা। তার মনে পড়ে গেল, সেই তার এই পা টিই তো গাছের নীচে পড়ে থাকা সেই লালচে আঠালো বস্তুটার উপর রেখেছিল।

সে আবার দৌড়ে সেই গাছের নীচে গেল, সে দেখল বস্তুটি এখনও পড়ে আছে। সে এবার তার সব পায়ে একে একে সেটি লাগিয়ে নিল আর চর্ম আনন্দে খেতে খেতে হাঁটতে লাগল। কিন্তু এতেও তার মন ভরল না। সে আবার সেই বস্তুটির কাছে ছুটে গেল। এবার সে মুখ লাগিয়ে আরামে খেতে লাগল। আহা কি সুন্দর এর স্বাদ। সে খেতে খেতে ভাবল- আমি তো এর পাশ গুলোই শুধু খাচ্ছি, না জানি এর পাশ গুলিই যদি এত স্বু-স্বাদু হয়, তাহলে এর মধ্যভাগটা কত স্বু-স্বাদু  হতে পাড়ে। সে ঠিক করল সে বস্তুটির মধ্য ভাগের স্বাদের আনন্দ উপভোগ করবে।

সে মধ্যভাগে যাওয়ার জন্য সামনের পা দুটি সেই বস্তুটির উপর রাখল কিন্তু পা সেই আঠালো বস্তুটির উপড়ে লাগে যাচ্ছে। তাই সে ঠিক করল গাছের উপর থেকে সোজা বস্তুটির মধ্যভাগে লাফ দিয়ে স্বাদ অনুভব করবে। ব্যস এরপর সে গাছে উঠে দিয়ে দিল এক লাফ,এসে পড়ল নীচে থাকা বস্তুটির উপড়ে। কিন্তু সে উপর থেকে লাফ দেওয়ায় একটু ভিতরে চলে গেল, আর তার সাড়া শরীর সেই চটচটে বস্তুটি দিয়ে ঢেকে গেল, বেচারি সেই মধ্যভাগের মধুর স্বাদ নেওয়ার পরিবর্তে সেখান থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসার বৃথা চেষ্টা করতে লাগল। আর একটা সময় পর তার প্রচেষ্টার অবসান হয়ে গেল, তার নিথর দেহ সেখানেই পড়ে রইল।

জীবনের শিক্ষা মূলক গল্প
জীবনের শিক্ষা মূলক গল্প

এতক্ষণে হয়ত বুঝে গেছেন, সেই বস্তুটি কি ছিল, আজ্ঞে সেই বস্তুটি ছিল মধু।

এই গল্পটি থেকে আমরা যে শিক্ষণীয় কথা জানতে পাড়ি সেটি হল- “অতিরিক্ত লোভ কোনোমতেই ভালো নয়, কারণ লোভের ফলেই মানুষের বুদ্ধিভ্রম ঘটে।  



Discover more from intellectpedia

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

Scroll to Top